Water stagnation

stagnation of water: বেহাল নিকাশি, ডুবল হুগলির গ্রাম-শহর

ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, আদিসপ্তগ্রাম-সহ বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনের গলাপোল বা সাবওয়ে জলে ডুবেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১ ০৬:০৪
Share:

রাস্তা ডুবে যাওয়ায় এ ভাবেই যাতায়াত। গোঘাটের সাতবেড়িয়া এলাকায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

নিম্নচাপের অবিরাম বৃষ্টিতে জলভাসি হল হুগলির গঙ্গাপাড়ের প্রায় প্রতিটি শহর। একই দশা জেলার বাকি তিন পুরসভারও। গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতিও একই। গোঘাটের কামারপুকুর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা রাস্তার সাতবেড়িয়া এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে কোমরসমান জল জমে যায়। সেই কারণে বৃহস্পতিবার সেখানে বাস-সহ সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

ডানকুনি পুরসভায় উন্নীত হয়েছে এক যুগ আগে। কিন্তু জলযন্ত্রণা কমার বদলে বেড়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন পূর্বাশা, বিধানপল্লি, স্টেশনপল্লি, পূর্বাঞ্চল, তাঁতিপাড়া, সূর্য সেন নগর, সারদাপল্লি প্রভৃতি জায়গায় কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটুসমান জল দাঁড়ায়। জল পেরিয়ে স্টেশনে যাতায়াত করতে দুর্ভোগ হয়। অভিযোগ, সরস্বতী নদী, ডানকুনি খাল, বেলানগর খাল সংস্কার না হওয়ায় এই পরিস্থিতি। শহরের বাসিন্দা সূর্যকান্ত কর্মকারের ক্ষোভ, ‘‘বৃষ্টি হলেই নরকযন্ত্রণা
ভোগ করতে হচ্ছে। স্থায়ী প্রতিকার
করা হোক।’’

বৈদ্যবাটীতে জিটি রোডের পশ্চিমপাড়ের বহু জায়গা জলমগ্ন। অভিযোগ, কিছু জায়গায় পাকা নর্দমা তৈরি হয়েছে অপরিকল্পিত ভাবে। কোথাও মাঝপথে কাজ থমকে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জয় ভঞ্জ এবং আনন্দ সাহা জানান, পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুর-প্রশাসক তথা স্থানীয় বিধায়ক অরিন্দম গুঁইনের দাবি, ‘‘দিল্লি রোডের ধারের নয়ানজুলি পরিষ্কার করায় বৃষ্টিতে জমা জল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেমে যাচ্ছে।’’ ভদ্রেশ্বরের সাহেববাগান ও মাঝেরপাড়ায় রাস্তায় রাস্তায় জমে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্ষায় ঘুঙির খাল টইটম্বুর হওয়ায় জল নামতে দেরি হচ্ছে।

Advertisement

ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, আদিসপ্তগ্রাম-সহ বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনের গলাপোল বা সাবওয়ে জলে ডুবেছে। ব্যান্ডেল, চুঁচুড়ার বেশ কিছু এলাকায় রাস্তায় জল দাঁড়িয়েছে। এখানকার মিলিটারি কলোনির বাসিন্দা অজয় বসু বলেন, ‘‘মূল রাস্তা সংস্কারের পর ভিতরের রাস্তা নিচু হয়ে গিয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই জল জমছে।’’ হুগলি-চুঁচুড়ার পুর-প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি কিছু নিকাশি নালা সংস্কারের পরে জল দ্রুত নামছে। অন্যত্রও সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’

শ্রীরামপুর পুরভবনের সামনে থেকে স্টেশনগামী রাস্তা, বিপি দে স্ট্রিট, জাননগর রোডের একাংশে জল জমে। রিষড়া পুরভবনের আশপাশে, মোড়পুকুর, কেসি সেন রোড, সুভাষনগর প্রভৃতি এলাকায় জল জমার সমস্যা অব্যাহত। উত্তরপাড়া স্টেশন লাগোয়া কাঁঠালবাগান বাজার, শান্তিনগর, পলাশ সরণি, হিন্দমোটর স্টেশন রোড, দেবাইপুকুর রোড, নন্দন কানন, কোতরংয়ে জল-থইথই আবস্থা। নোংরা জল বাড়িতেও ঢুকেছে। পুর-প্রশাসক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

বিভিন্ন পুরসভায় বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের কাজ নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ। অনেকেই রাস্তায় আবর্জনা ফেলেন। ফলে, প্রচুর প্লাস্টিক নর্দমায় পড়ে জল আটকে যায়। একটু বৃষ্টিতেই খেসারত দিতে হয় শহরকে। পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাফাই নিয়ে বহু বিদায়ী কাউন্সিলর সক্রিয় নন বলেও অভিযোগ।

ভরা নদ-নদী এবং টানা বৃষ্টিতে আরামবাগ মহকুমা ভুগছে। আরামবাগ পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডের রাস্তা জলের তলায়। ছ’টি ব্লকেই কৃষিজমিতে জল জমেছে। নদ-নদী ভরে থাকায় জমা জল নামছে না। উল্টে নদীর জল খাল দিয়ে মাঠে ঢুকছে। সদ্য রোপণ করা আমন ধান জলের তলায়। আনাজেরও একই অবস্থা। মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘মাত্র ৫%-৮% জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আমরা নজর রাখছি। যেখানে বৃষ্টির অভাবে চাষাবাদ করা যাচ্ছিল না, সেখানে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন।’’

খানাকুল-২ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে মাঠে জমা জলের উচ্চতা ৪ ফুট ছাড়িয়েছে। ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ সানকির অভিযোগ, ‘‘আরামবাগ মাস্টারপ্ল্যানের উপকারিতা মেলেনি। উল্টে প্রকল্পের অসম্পূর্ণতার জেরে ভুগতে হচ্ছে।’’ সেচ দফতর (নিম্ন দামোদর) সূত্রের দাবি, ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের প্রক্রিয়া চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement