মনোরঞ্জন ব্যাপারী(বাঁ দিকে), রুনা খাতুন(ডান দিকে)
বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবং যুবনেত্রী রুনা খাতুন ও তাঁর স্বামী অরিজিৎ দাসের দীর্ঘ দিনের কোন্দল মিটেছে বলে দাবি দলের জেলা নেতৃত্বের। দু’পক্ষের বাক্যুদ্ধ থামাতে মঙ্গলবার ত্রিবেণীতে দীর্ঘ বৈঠক হয়। দলের জেলা নেতৃত্ব দু’পক্ষকেই কোন্দল নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটার নির্দেশ দেন। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই যে এই পদক্ষেপ, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ‘একতা’ কতদিনের, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে।
পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে বলাগড় বিধানসভায় ৩৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে তাদের বিদায়ী সাংসদ রত্না দে নাগ জনপ্রিয় এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেত্রী হওয়া সত্ত্বেও হেরে যান বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। শাসকদল ওই আসন পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে ওই কোন্দলকে কেন্দ্র করেই।
ঘটনা হচ্ছে, ভোটের দোহাই দিয়ে দল ‘মিলনের বার্তা’ দিলেও তৃণমূল কর্মীদের একাংশ তাতে অখুশি। দু’পক্ষে বিভাজিত হয়ে থাকা কর্মীরাই চেয়েছিলেন, অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিন দলীয় নেতৃত্ব। তেমনটা না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। একাধিক কর্মীর কথায়, যে পরিস্থিতি হল, ভোটের আগে মানুষের কাছে যাওয়ার মুখ তাঁদের আর নেই। ফলে, সাংগঠনিক দুর্বলতায় কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিজেপি।
দলের অপর একটি অংশের অবশ্য দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব ভোটে পড়বে না। তারা বলছে, এ বারেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে ব্লক
সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তোলার মতো অভিযোগ উঠেছিল। দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে টাকা ফেরাতেও হয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তার পরেও নবীন হইহই করে ভোটে জিতেছেন তো বটেই, পঞ্চায়েত প্রধানও হয়েছেন। কার্যত মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ওই নেতার
বক্তব্য, ‘‘মানুষ পরিষেবা দেখবে। তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দল একটু-আধটু থেকেই থাকে!’’
বিজেপি এবং সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, গঙ্গার বালি এবং মাটিতে তৃণমূল নেতাদের প্রচুর টাকা ‘আয়’। তার বখরা নিয়েই গোলমাল। সেই সমস্যা মিটে গেলেই সবাই ‘শান্ত’। যেমন, এখন হয়েছেন! তাঁদের পাশাপাশি তৃণমূলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় নানা অভিযোগ তুলে নবীনের সঙ্গে দল করবেন না বলে জানিয়েছিলেন বিধায়ক। পরে দু’জনে ‘এক’ হয়ে যান।
পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবদমান দু’পক্ষের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ পাশ কাটিয়ে দলের গোষ্ঠীকোন্দল ‘ক্লোজ়ড চ্যাপ্টার’ হিসাবে দেখাতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শ্রীরামপুর-হুগলি সংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি এখন অতীত। দু’পক্ষকেই আমরা সতর্ক করেছি, সমাজমাধ্যমে কিছু লেখা যাবে না। অন্যথায় দল কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না। কোনও সমস্যা হলে দলের মধ্যেই মেটাতে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, বিধায়কের এক নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগ উঠছিল। বিধায়কের নিরাপত্তা ছাড়াও নানা বিষয়ে তাঁর ‘ভূমিকা’ থাকছিল বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে তৃণমূলের অন্যতম এক রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘বিধায়কদের নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেখেন। ওই বিষয়ে আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছিল। শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে বিষয়টি আমরা আনি। এরপরই যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সম্প্রতি তাঁকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।’’
এ নিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘‘ওই সব ডিপার্টমেন্টের (প্রশাসনিক) ব্যাপার। আমি কিছু জানি না। কাকে রাখবে, কাকে রাখবে না, সেটা ওদের (প্রশাসনের) ব্যাপার।’’ (শেষ)
তথ্য সহায়তা: বিশ্বজিৎ মণ্ডল