শিশুখুনে গ্রেফতার হওয়া ইফ্ফাত পরভিন এবং শান্তা শর্মা। —ফাইল চিত্র।
আট বছরের সন্তানকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মা এবং তাঁর বান্ধবী। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন হুগলির কোন্নগরের আদর্শনগরের বাসিন্দা শান্তা শর্মা এবং ইফ্ফাত পরভিন। যদিও কেউই এখনও পর্যন্ত খুনের কথা নিজের মুখে স্বীকার করেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, এখন দু’জনেই জেলের খাবার মুখে তুলতে চাইছেন না। সন্তান খুনে গ্রেফতার হওয়া শান্তা চেয়েছেন বিরিয়ানি খেতে। তাঁর বান্ধবী ইফ্ফাত আবার চান চাইনিজ়। যদিও কাউকেই ‘পছন্দের খাবার’ দেওয়া হয়নি। আর তাতে নাকি রেগেমেগে কেউই তদন্তে সহযোগিতা করছেন না।
খুন হওয়া শিশুর মা শান্তাকে রাখা হয়েছে উত্তরপাড়া থানায়। পরভিন বন্দি শ্রীরামপুর মহিলা থানায়। তবে জেরার সময় পরভিনকেও উত্তরপাড়া থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তদন্ত অবশ্য বেশি দূর এগোচ্ছে না। কারণ, মুখই খুলতে চাইছেন না দুই অভিযুক্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘মুখরোচক খাবার খেতে চেয়েছেন শান্তা শর্মা এবং তাঁর বান্ধবী ইফ্ফাত পরভিন। কেউ চাইছেন বিরিয়ানি খেতে। কেউ আবার চাইছেন চাইনিজ়। জেলের ডাল-ভাত বা রুটি কোনও পদই তাঁদের মুখে রোচে না। আর পছন্দের খাবার না পেয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছেন দু’জনেই।’’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্কুলছাত্র শ্রেয়াংশু শর্মার খুনের চার দিন পর তার মা এবং মায়ের বান্ধবীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, দাম্পত্য কলহ এবং শান্তা এবং পরভিনের সমকামী সম্পর্কের কারণে খুন হতে হয়েছে শিশুকে। তবে পুলিশি জেরাতেও খুনের কথা স্বীকার করেননি শান্তা বা তাঁর বান্ধবী।
শান্তা সম্পর্কে খোঁজখবর করে জানা গিয়েছে, কোন্নগরের কানাইপুরের গঙ্গানগরে দুই কাঠা জমি কিনেছিলেন। সেই জমি কেনার মধ্যস্থতা করেন সঞ্জয় সাঁতরা নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, সাত বছর আগে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই জমি কিনেছিলেন শান্তা। তাঁর নামেই জমির মিউটেশন হয়। কথা ছিল, সেখানে বাড়ি করার। এখনও বাড়ি তৈরি হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে সেই জমি দেখতে আসতেন শান্তা। মাঝেমধ্যে স্বামী পঙ্কজ শর্মাকে নিয়েও জমি দেখে যান। তবে বছর তিনেক আর ওই জমি দেখতে যাননি তিনি। এই সংক্রান্ত বিষয়ে কি কোনও অশান্তি ছিল পরিবারে? উঠছে সেই প্রশ্নও।
পুলিশ সূত্রে খবর, শান্তার বাবা রেলে চাকরি করতেন। তাঁরা তিন বোন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বাবা তিন মেয়েকেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন। সম্ভবত সেই টাকা দিয়েই ওই জমি কেনেন শান্তা।
শিশুখুনে অভিযুক্ত শান্তা এবং পরভিন নয় দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে বেশ কিছু সূত্র পেয়েছে। কিছু তথ্যপ্রমাণও পেয়েছে। এখন দুইয়ে দুইয়ে চার করতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কিন্তু দু’জনে তদন্তে অসহযোগিতা করছেন।