বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। প্রতীকী চিত্র।
প্রায় এক বছর ধরে হাওড়ার শিশুশ্রমিকদের ৩৪টি স্কুলই বন্ধ রয়েছে। ফলে, ওই সব শিশুশ্রমিকদের পড়াশোনা যেমন লাটে উঠেছে, তেমনই চুক্তির ভিত্তিতে ওই সব স্কুলে যে সব শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী কাজ করেন, তাঁরাও বেকার হয়ে গিয়েছেন।
একসময়ে যে সব শিশুশ্রমিক স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিল, তাদের স্কুলমুখী করতেই ২০০৮ সালে একটি প্রকল্পে (ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্ট) কেন্দ্রীয় সরকার স্কুলগুলি চালু করে। জেলা প্রশাসনের এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে স্কুলগুলি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে।
হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের নির্দেশেই স্কুলগুলি বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে স্কুলগুলি চালানো হবে। কিন্তু কবে থেকে সেটা কার্যকর হবে, তা কেন্দ্র না জানানোয় চালু করা যাচ্ছে না।
৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে যে সব শিশুশ্রমিক স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে, তাদের ওই স্কুলগুলিতে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। এখানে তাদের পড়িয়ে সাধারণ স্কুলগুলিতে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ভাবে তাদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হয়। স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলও দেওয়া হত। দেওয়া হত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক। প্রতিটি স্কুলে ৫০ জন করে পড়ুয়াকে ভর্তি করানো হত। এক-একটি স্কুলে শিক্ষক ছিলেন দু’জন করে। তাঁদের বেতন ছিল সাত হাজার টাকা করে। দু’জন করে শিক্ষাকর্মী ছিলেন। তাঁদের বেতন ছিল যথাক্রমে পাঁচ হাজার এবং সাড়ে তিন হাজার টাকা করে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়ার কথা জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শিশুশ্রমিকদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই সব শিশুরা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কাজে। অনেকে রাজ্যের বাইরেও চলে গিয়েছে। ওই স্কুলগুলিতে যাঁরা চাকরি করতেন, তাঁরাও কাজ হারিয়েছেন।
উলুবেড়িয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চারটি স্কুল চালাত। এই সংস্থার কর্ণধার মন্টু শী বলেন, ‘‘প্রকল্পটি কবে ফের শুরু হবে, বুঝতে পারছি না। স্কুলগুলি চালানোর জন্য খরচ বাবদ অনেক টাকা আমরা পাব। সেই টাকাও পাচ্ছি না।’’
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সমস্যাটি সারা রাজ্যেরই। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনও নির্দেশ আসেনি।