লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দলছুট হাতি। আরামবাগের বয়েজ স্কুল মাঠ এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
এক দলছুট বুনো হাতির তাণ্ডবে শনিবার দিনভর আতঙ্কে কাটালেন আরামবাগের বাসিন্দারা। দাঁতালের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন চার জন। তছনছ হয়ে গিয়েছে শহর সংলগ্ন কয়েকশো বিঘার আলুখেত। দুপুরে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন মহকুমাশাসক সুভাষিণী ই।
বিকেল ৫টা নাগাদ হাতিটিকে শহর থেকে বের করতে সক্ষম হয় হুলা পার্টি। বন দফতর জানিয়েছে, সন্ধ্যায় হাতিটি দ্বারকেশ্বর নদ পার হয়ে পশ্চিমে গোঘাট অতিক্রম করেছে। হাতিটি গোঘাট সংলগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা জঙ্গল থেকে চমকাইতলা হয়ে গোঘাট পার করে আরামবাগ চলে আসে। পরিস্থিতি সামলাতে আরামবাগে আসা রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) অশোক প্রতাপ সিংহ সন্ধ্যায় বলেন, “একটি হাতি দলছুট হয়ে চলে এসেছে। হুলা পার্টি এনে তাকে ফেরানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।” বন দফতরের আরামবাগের চাঁদুর রেঞ্জের এক আধিকারিক বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি সরেজিমেনে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণেরব্যবস্থা আছে।’’
আগেও বহুবার গড়বেতা এবং বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গল হয়ে আরামবাগ মহকুমায় দলছুট হাতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। হাতির হানায় প্রচুর ফসল ও ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়া ছাড়াও জীবনহানির নজিরও আছে। তবে আরামবাগ শহরে হাতি ঢোকার ঘটনা এই প্রথম।
শনিবার ভোরে হাতিটিকে প্রথম দেখা যায় শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে, দ্বারকেশ্বর নদের পশ্চিম পাড়ে কালীপুরের বিষ্ণুপুরে। খবর পেয়ে বন দফতরের কর্মীরা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। হাতিটির কাছাকাছি না-যাওয়ার জন্য মাইকে প্রচার শুরু হয়। হুলা পার্টি আসে। তারপরেও দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি।
দুপুরে কালীপুরে হাতিটিকে কাছ থেকে প্রণাম করতে যান ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আনাজ ব্যবসায়ী, বছর চল্লিশের মিলন খটিক। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে করে আছড়ে ফেলে। দাঁত দিয়েও আঘাত করে। গুরুতর জখম অবস্থায় মিলনকে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে হাতির তাড়া খেয়ে হুলা পার্টির অপু জনা নামে একজন পড়ে গিয়ে গুরুতর চোট পান।
হুলা পার্টির বাধা এড়িয়ে বিকেল ৩টে নাগাদ হাতিটি দ্বারকেশ্বর পার হয়ে মূল শহরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে শহরের মূল বাজার তছনছ করে। তারপরে ৫ নম্বর, ৬ নম্বর এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড দাপিয়ে ফের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দ্বারকেশ্বর নদ পার হয়ে কালীপুরে যায়। এর মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি গলি দিয়ে যাওয়ার সময় বটতলায় হাতিটি ভারতী মণ্ডল নামে এক প্রৌঢ়ার মাথায় শুঁড়ের ঝাপটা দেয়। মাথা দেওয়ালে ঠুকে যাওয়ায় প্রৌঢ়া আহত হন।
এরপরে গোঘাটের কুমুড়শায় হুলা পার্টির সঙ্গে হাতি খেদাতে গিয়ে হানায় জখম হন প্রসেনজিৎ ধারা নামে এক যুবক। হাতিটি শুঁড় দিয়ে তাঁকে আছড়ে ফেলে বুকে পা দিয়ে পিষে দেয় বলে বলে বন দফতরের কর্মীরা জানান। তাঁকেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এ দিনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কালীপুরের মুকুল মালিক নামে এক চাষি বলেন, “বারবার হাতি ঢুকে এলাকায় সম্পত্তি এবং জীবনহানি ঘটাচ্ছে। বন দফতরের আরামবাগ রেঞ্জের তরফে হুলা পার্টির পরিকাঠামো গড়া উচিত। নইলে বাঁকুড়ার জয়পুর কিংবা পাঞ্চেতথেকে হাতি তাড়ানোর দল আনতে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।” বন দফতরের আরামবাগ রেঞ্জের এক অফিসার জানান, আরামবাগ রেঞ্জে হুলা পার্টির পরিকাঠামো গড়া নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।