এমনই বেহাল দশায় পড়ে ভবনটি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
কোভিডের সময়ে রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল হাওড়ার বালিটিকুরির ইএসআই হাসপাতাল। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের অভাবে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি ঝকঝকে ১৬তলা হাসপাতাল ভবন গত চার বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থেকে সেটি এখন দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র।
১ থেকে ১৬ প্রতিটি তলায় লুটপাট চালিয়ে পাচার হয়ে গিয়েছে দরজা-জানলা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে লিফ্টের যন্ত্রাংশও। ভবনটি হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন আস্ত খণ্ডহর।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এমপ্লয়িজ স্টেট ইনশিয়োরেন্স কর্পোরেশন’ বা ইএসআইসি-এর উদ্যোগে জাপানি গেটের কাছে কয়েক একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয় বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালের দু’টি বহুতল ভবন। ইএসআইসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালের আট ভাগের ৭ ভাগ দায়িত্ব (রক্ষণাবেক্ষণ থেকে অর্থ বিনিয়োগ) কেন্দ্রীয় সরকারের। এক ভাগের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে ১৬তলা ভবনটিতেই রোগী পরিষেবা শুরু হয়। দ্বিতীয় ভবনটির কাজ শেষ হওয়ার পরে পুরো হাসপাতালটি সেখানে উঠে যায় ২০২২ সালে। তার পর থেকে ১৬তলা ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে। হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক ঠিকাদার জানান, ওই ভবনে দীর্ঘদিন ধরে কোনও নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন না। যার ফলে সেটি হয়ে ওঠে দুষ্কৃতীদের আস্তানা। দিনে দুপুরে অবাধে সেখানে ঢুকে সিলিং ফ্যান, বিদ্যুতের তার, জানলা-দরজা, আলো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, লিফ্টের মোটর সব লুটপাট করে নিয়ে গিয়েছে। ওই ঠিকাদারের দাবি, ‘‘আমরা দেখাশোনা করতাম আগে, তখন কেউ ঢুকতে পারতো না।’’
১৬তলা ভবনে ঢুকেই গিয়ে দেখা গেল, দিনের বেলায় ভুতুড়ে বাড়ির মতো হয়ে রয়েছে। একতলা থেকে ১৬ তলার কোনও তলেই না আছে আলো, পাখা, না আছে লিফ্টের ব্যবস্থা। এমনকি দেওয়াল থেকে উপড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিদ্যুতের তার, জলের কলও।
ইএসআই হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জন সেন বলেন, ‘‘এই সব যা চুরি হয়েছে, তা কোভিডের পরে হয়েছে। আমরা যখন ওই হাসপাতাল ছেড়ে নতুন ভবনে উঠে গিয়েছি তখন চুরি হয়েছে। তবে এখন স্থানীয় থানা এখানে পুলিশ ক্যাম্প বসানোয় দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে। ভবনটিকে রক্ষা করার জন্য আমরা কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছি।’’ সুপার জানান, ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার পরে ভবনটিকে স্টাফ কোয়ার্টার্স হিসাবে ব্যবহার করা হবে।