—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
হাওড়ার ফেরিঘাটগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’র দুরবস্থার পিছনে সীমাহীন দুর্নীতি আছে বলে দাবি করে গত কয়েক মাসে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য সমবায় দফতরে। অভিযোগকারীদের মধ্যে ওই সংস্থার কর্মীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই আছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও। যার পরিপ্রেক্ষিতে দফতরের সহ-সচিব রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন গত মাসেই। তিনি নির্দেশ দেন, ওই সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করে অবিলম্বে রিপোর্ট জমা দিতে হবে, যাতে রাজ্য সমবায় দফতর দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু অভিযোগ, সেই তদন্ত রিপোর্ট আজও জমা পড়েনি। অথচ, এরই মধ্যে লঞ্চের অভাবে জলপথ পরিবহণ পরিষেবা প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। চরম সমস্যায় পড়েছেন তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়া ৩০০ জনের বেশি কর্মী ও তাঁদের পরিবার।
রাজ্য সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসের ১০ তারিখ ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’র কর্মীরা ২২ দফা অভিযোগ সংবলিত একটি চিঠি দফতরে জমা দেন। ওই চিঠিতে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, কী ভাবে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ পরিবহণকে অচল করে দেওয়া হয়েছে। আর সেই কারণেই চলতি মাসে আগাম কোনও কিছু ঘোষণা না করেই হঠাৎ লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। একই ভাবে সমবায় দফতরের এক কর্তাকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে ভিজিল্যান্সের মাধ্যমে তদন্ত করিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য উমেশ রাইও।
সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পরে দফতরের সহ-সচিব রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তদন্ত করতে। যদিও সেই তদন্ত রিপোর্ট এখনও দফতরে জমা পড়েনি। অভিযোগকারী কর্মীদের দাবি, ওই তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লেই জানা যাবে, কী ভাবে সংস্থার পুরনো লঞ্চগুলিকে দিনের পর দিন ‘ড্রাই ডক’ না করিয়ে, সস্তার যন্ত্রাংশ লাগিয়ে কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হয়েছে। যে কারণে ১১টি লঞ্চের মধ্যে সাতটি চিরকালের মতো বাতিল হতে বসেছে। বাকি চারটি লঞ্চ দিয়ে এতগুলি ঘাটের জলপথ পরিবহণ চালানো যে সম্ভব নয়, তা মানছেন সংস্থার কর্তারাই।
কী ভাবে অচল করা হয়েছে এই সমবায়কে?
সমিতির কর্মীদের অভিযোগ, প্রথমত, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্য পরিবহণ দফতরের তরফে ১১টি লঞ্চের ‘ড্রাই ডক’ করিয়ে মেরামতি করানোর জন্য মোট ৪৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫ লক্ষ টাকার হিসাব দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি ২৮ লক্ষ টাকার কোনও হিসাব মেলেনি। দ্বিতীয়ত, গত কয়েক বছরে কত কোটি টাকার ডিজ়েল কেনা হয়েছে অথবা বিজ্ঞাপন বাবদ কত কোটি টাকা বকেয়া আছে, তারও হিসাব কোনও রহস্যজনক কারণে জানানো হয়নি। তৃতীয়ত, হাওড়া স্টেশনের উল্টো দিকে সমিতির জমিতেই দু’টি পাইস হোটেল রয়েছে। সেই দু’টি হোটেলের ভাড়া বাবদ বহু লক্ষ টাকা বকেয়া থাকলেও তা আদায় করা হয়নি। চতুর্থত, সমিতির স্থায়ী কর্মীদের অ্যাকাউন্টস এবং ভাড়ার কুপন ছাপার মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে সরিয়ে সেই জায়গায় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজে যোগ দেওয়া কর্মীদের ঢোকানো হয়েছে। যার ফলে দুর্নীতি চরমে উঠেছে।
এ বিষয়ে রাজ্য সমবায় দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘সমস্ত অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিবহণ
দফতরের তরফে অস্থায়ী ভিত্তিতে লঞ্চ দিয়ে পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চলছে। হাওড়া থেকে চলা ফেরি পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে পরিবহণ দফতর সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’