অভিযানে মহকুমাশাসক। শুক্রবার দুপুরে শ্রীরামপুরের পাঁচুবাবুর বাজারে। ছবি: প্রকাশ পাল।
এত দিন প্রচার চলেছে নিয়মরক্ষায়! প্লাস্টিকের নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ বন্ধে এ বার শ্রীরামপুর মহকুমার পুরএলাকায় জোরদার অভিযান শুরু হল মহকুমাশাসকের উদ্যোগে। শুক্রবার মহকুমার প্রত্যেকটি পুরসভায় (ডানকুনি, উত্তরপাড়া কোতরং, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর ও বৈদ্যবাটী) একযোগে অভিযান চলে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করার পাশাপাশি নিষিদ্ধ ১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয়।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবার ছিল ‘ওয়ার্ল্ড পেপার ব্যাগ ডে’। পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং কাগজের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে দিনটি পালন করা হয়। এ দিন অভিযানে বেরিয়ে মহকুমাশাসক শম্ভুদীপ সরকার জানান, শীঘ্রই মহকুমার প্রত্যেকটি পুরসভাকে ‘নিষিদ্ধ প্লাস্টিকমুক্ত’ ঘোষণা করা হবে। দিন দশেকের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। অভিযান লাগাতার চলবে। এর পরেও ওই সব ব্যবহার বন্ধ না হলে আইনগত আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই কাজে এক সময় উত্তরপাড়া কোতরং উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছিল। নজরদারি শিথিল হতেই পূর্বাবস্থা ফিরে আসে। এ বার উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আগে অভিযান চালানোর সময় আমরা দেখেছি, মানুষ বিকল্প চান। বিকল্প না দিলে মানুষের প্লাস্টিক ব্যবহারের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা যাবে না। তাই এ বার আমরা পুরসভার তরফে মাটিতে মেশে এমন ক্যারিব্যাগ ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করছি। আশা করছি, বিকল্প জোগান দেওয়ার ফলে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারে বিরত থাকবে। দমদম পুরসভা ভাল ফল পাচ্ছে। তাই আমরাও আশাবাদী।’’
শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগর ও ডানকুনিতেও কড়া পদক্ষেপ আগে কার্যত হয়নি। বৈদ্যবাটীতে পুরসভা ধারাবাহিক অভিযান চালালেও আশপাশের শহরে ক্যারিব্যাগ নিয়ন্ত্রণের বালাই না থাকায় তারা প্রশ্নের মুখে পড়ছিল। দিন কয়েক আগে মহকুমাশাসক পুরসভাগুলিকে নিয়ে অভিযানের রূপরেখা তৈরি করেন। ঠিক হয়, ‘পুরস্কার এবং তিরস্কার’ নীতি নিয়ে চলা হবে। দোকান-বাজার, মার্কেট চত্বর, পার্ক, গঙ্গার ধার, ধর্মস্থান, জনবহুল এলাকা— অভিযান চালানো হবে সর্বত্র।
শুক্রবার মহকুমাশাসক যান শ্রীরামপুর শহরের পাঁচুবাবুর বাজারে। ছিলেন পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা, উপ-পুরপ্রধান উত্তম নাগ, পুর-পারিষদ (জঞ্জাল) পিন্টু নাগ-সহ পুরআধিকারিকরা, আইসি সুখময় চক্রবর্তী প্রমুখ। একাধিক গুদামে হানা দিয়ে তাঁরা দেখেন, নিষিদ্ধ প্রচুর ক্যারিব্যাগ মজুত। গুদাম সিল করে দেওয়া হয়। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, পরিমাপ করে ওই ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিকের নিষিদ্ধ অন্য সামগ্রী, থার্মোকলের থালা-বাটি বাজেয়াপ্ত করা হবে। দোকান থেকে বেশ কিছু সামগ্রী বাজেয়াপ্তও করা হয়। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হওয়ার আর্জি জানান প্রশাসনের আধিকারিরক।
রিষড়ায় স্টেশন লাগোয়া বাস্তুহারা বাজারে অভিযান চলে। পুর আধিকারিক অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, দোকানে দোকানে ক্যারিব্যাগের ঘনত্ব পরীক্ষা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত, জরিমানা করা হয়েছে। তবে, কয়েকটি দোকানে দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে না। কোথাও ১২০ মাইক্রনের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বর্জনকারী ব্যবসায়ীদের পুরসভার তরফে ‘পরিবেশবন্ধু’ সম্মান দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে অসিতাভ জানান।
শেওড়াফুলি হাটে চার পাইকারি বিক্রেতা ও এক ক্রেতাকে জরিমানা করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় ২০ কেজি ক্যারিব্যাগ। মাছ বিক্রেতারা অভিযোগ তোলেন, হাতল ছাড়া যে পাতলা ক্যারিব্যাগে মুদিখানায় সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে, একই ব্যাগের জন্য তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের একাংশের বক্তব্য, আগে এমন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ তৈরি এবং সরবরাহ বন্ধ করা হোক।