৪৫ বছর বাসের কন্ডাকটার ছিলেন তারকেশ্বর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
চুল-দাড়ি সব সাদা। রোদ মাথায় করে থানায় এসেছেন। জিজ্ঞাসা করলে বলছেন, ‘‘কী বলব! ছেলে আমায় দেখে না। ছ’বছর ধরে এক বেলা খাওয়ার মতো টাকা দেয়। পাড়ার সবাই বলল, পুলিশে যেতে। তাই অভিযোগ জানাতে এসেছি।’’ ছেলে কী করেন? ‘‘স্কুলে পড়ায়’’— বলছেন বৃদ্ধ।
৪৫ বছর বাসের কন্ডাকটার ছিলেন তারকেশ্বর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দারিদ্র জয় করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন অনেক দূর। ছেলে চাকরি পেয়েছেন। তার পরেই স্ত্রীকে হারিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেটা ২০১৪ সাল। এখন বাড়িতে শ্বাশুড়ি আর তিনি থাকেন। ৭৪-এ পৌঁছে শরীর আর দেয় না। কাজও করতে পারেন না। কর্মক্ষমতাহীন সেই বাবাকে অথৈ জলে ফেলেছেন শিক্ষক ছেলেও। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘মাস গেলে দেড় হাজার টাকা দেয়। ওতে আমার সুগার, প্রেশারের ওষুধ কিনতেই সব খরচ হয়ে যায়। আর সামান্য যা থাকে, তাতে এক বেলা ভাল করে খেতে পারি না।’’
রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ, ছেলে নানা রকম ছলচাতুরি করে তাঁর সঙ্গে। কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর বাড়ি বিক্রি করার অর্থে অবসর জীবন কাটাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সেখানেও বাধা দেয় ছেলে মানিক ঘোষ। ৩০ লক্ষের সম্পত্তি ১০ লক্ষে কিনতে চেয়ে বলেন, নগদ টাকা দেবেন না, বাবার নামে স্থায়ী আমানত করে দেবেন। তিনি ‘নমিনি’ থাকবেন। যা সুদ পাবেন, তাই দিয়ে বাবা যেন সংসার চালিয়ে নেন। রাজি হননি রবীন্দ্রনাথ।
পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক ছেলে মানিক স্বীকার করে নেন, বাবা বাসের কন্ডাক্টারি করেই তাঁকে পড়িয়েছেন। কষ্টে কেটেছে শৈশব। মানিক বলছেন, ‘‘আমার ক্ষমতায় কুলোবে না, তাই দু’হাজারের বেশি দিতে পারি না। উনি পুলিশে গিয়েছেন, যেতেই পারেন, আমার কিছু করার নেই। ছ’জনের সংসার চালাতে হয়, কোথায় পাব?’’
স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই ওই বাড়িতে বাবা-ছেলের অশান্তি লেগেই আছে। সে কারণেই হয়তো বাবা থানায় ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।