তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশ চন্দননগরে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
গত নির্বাচনে চন্দননগর পুরবোর্ড হাতে এলেও পুরো সময় চালাতে পারেনি তৃণমূল। তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে মাঝপথে পুরবোর্ড ভেঙে দেয় রাজ্য সরকার। পরবর্তী সময়ে পুর পরিষেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে জনমানসে। ফের হরেক পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের দুয়ারে
শাসক দল।
শুক্রবার শহরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অনুষ্ঠান ভবনে সাংবাদিকদের ডেকে ইস্তেহার প্রকাশ করল তৃণমূল। নিকাশি, রাস্তাঘাট, সৌন্দর্যায়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন প্রভৃতি ১০টি বিষয়ের কথা তাতে তুলে ধরা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে— ‘চন্দননগরের ১০ দিগন্ত’। মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, দলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক
জেলার চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র, সভাপতি স্নেহাশিস চক্রবর্তী, প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ যাদব উপস্থিত ছিলেন। দলের সব প্রার্থীও ছিলেন। ইস্তেহারের বিষয়গুলি ব্যাখ্যা
করেন ইন্দ্রনীল।
জল জমার সমস্যা এই শহরকে ভোগাচ্ছে। সমস্যা কার্যত মেনে নিয়েও পরিস্থিতির দায় প্রকৃতির উপরে চাপিয়েছে শাসক দল। ইস্তেহারে বলা হয়েছে, বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে অতিরিক্ত জল জমার সমস্যা মোকাবিলায় দীর্ঘস্থায়ী ও বৈজ্ঞানিক সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। খাল সংস্কার করা হবে। খালে যাতে আবর্জনা না ফেলা হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। ইন্দ্রনীলের বক্তব্য, বৃষ্টিপাতের ধরন বদলের জন্য কিছু জায়গায় জল জমার সমস্যা হচ্ছে।
ফুটপাত ও ডিভাইডার-সহ খানা-খন্দহীন রাস্তা, পর্যাপ্ত আলো, সবুজায়ন ও নবসজ্জিত পার্ক, অবিচ্ছিন্ন পানীয় জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দু’টি নতুন বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করা হবে। বাড়ি, দোকান তথা ব্যবসাকেন্দ্র থেকে পচনশীল ও অপচশীল আবর্জনা পৃথক করে সংগ্রহ এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা হবে। জল সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা— দু’টি ক্ষেত্রেই অবশ্য নানা প্রশ্ন রয়েছে শহরবাসীর। ইস্তেহারে আরও প্রতিশ্রুতি, বাজারের মানোন্নয়ন করা হবে। প্রতিটি বাজারে জৈব শৌচাগার থাকবে। তিনটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে। সেগুলি দিনরাত খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
পরিষেবার সমস্যা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মোবাইল অ্যাপে জানানো যাবে। খারাপ রাস্তা, নর্দমা, ভ্যাটের জিওট্যাগযুক্ত ছবি অ্যাপে আপলোড করলে ১৪ দিনের মধ্যে সমাধান করা হবে। রবীন্দ্রভবন সংস্কার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে চন্দননগরের যোগাযোগের স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করতে একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। শহরের ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জায়গার সঙ্গে মানুষের পরিচয় করাতে ‘হেরিটেজ ওয়াক’, ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’র ব্যবস্থা করা হবে। গঙ্গার ঘাটের সৌন্দর্যায়ন করা হবে।
আগেই বামেরা ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। তাতে কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য ইস্তেহারে কর্মসংস্থান নিয়ে শব্দ খরচ করেনি। টোটোর লাগামহীন চলাচল আজকাল নাগরিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দূষণ এবং বেহাল নিকাশির কারণ বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারেও শাসক দলের ইস্তেহারে আলোকপাত করা হয়নি।
ইস্তেহার নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তরও তৃণমূল নেতৃত্ব দেননি। ইন্দ্রনীল জানিয়ে দেন, সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব তাঁরা দেবেন না।
বামেরা অবশ্য শাসক দলকে বিঁধতে ছাড়েনি। তাদের কটাক্ষ, তৃণমূল আমলে কোনও শিল্প আসেনি। সিপিএম নেতা হীরালাল সিংহ বলেন, ‘‘পুরসভায় ২০০ শূন্যপদ রয়েছে। সাতশো অস্থায়ী কর্মী। আমরা ক্ষমতায় এলে সব শূন্যপদে নিয়োগ করব। তৃণমূলের আমলে সব থেকে বঞ্চিত শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের স্বনির্ভরতার দিশা দেখাব। ওই সব প্রশিক্ষণ এখন কাগজে-কলমে রয়েছে। পরিবেশবান্ধব শিল্পোদ্যোগেও আমরা সহায়তা দেব।’’
বিজেপি নেতা স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের কর্মসংস্থানের দিশা নেই, তাই ইস্তেহারে ওরা রাখেনি। যে বিষয় নিয়ে ওরা ভাবিত নয়, সেটা ইস্তেহারে লিখবে কেন!’’