নিজস্ব চিত্র
ভরদুপুরে ডাকাতি! তাই নিয়েই ত্রস্ত চন্দননগর। ডাকাত ধরতে জলপথ, স্থলপথ বন্ধ করে কিছু ক্ষণের জন্য কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আটকে ফেলা হল শহরকে। নাকা চেকিং চলল শহরের ৩৯টি মোড়ে। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, চন্দননগরের সমস্ত ফেরিঘাট বন্ধ করে তন্ন তন্ন করে খোঁজ শুরু হল ডাকাতদের। দুপুর পৌনে তিনটে থেকে বিকেল পর্যন্ত যেন রুদ্ধশ্বাস নাটক দেখল চন্দননগর!
মঙ্গলবার চন্দননগরের প্রধান বাজারগুলি বন্ধ থাকে। পুলিশের অনুমান, সেই সুযোগ নিয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা করেই একটি স্বর্ণঋণ সংস্থার অফিসে ডাকাতি করতে আসে ছ’-সাত জন। ওই সংস্থার কার্যালয়ে এসে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে তারা। শুরু হয় মারধর। ওই সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী বিষ্ণুপ্রিয় রায় বলেন, ‘‘ওরা বেশ কয়েক জন ছিল। আমি খাতায় সই করতে বলায় মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে মারধর শুরু করে। বেঁধেও ফেলে। অফিসে হইচই শুরু হলে সবাইকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখায়।’’ অফিসের এক জন কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। আরও কয়েক জনকে মারধর করে। এর পরেই ওই সংস্থার কর্মীদেরই এক জন সাইরেন বাজিয়ে দেন। সেই শব্দ শুনে গুলি চালাতে শুরু করে ডাকাতেরা। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন জড় হয় যায়। খবর পায় পুলিশও। এক কিলোমিটারের মধ্যে থানা হওয়ায় ঘটনাস্থলে দ্রুত হাজির হয় পুলিশ।
চন্দননগর লক্ষ্মী বাজারে তখন তুলকালাম কাণ্ড। সংস্থার অফিসের ভিতরে ডাকাতদলের তাণ্ডব যখন চলছে, তখনই ওই সংস্থার অফিস ঘিরে ফেলে পুলিশ। বিপদ বুঝে পাঁচিল টপকে পিছন দিয়ে পালাতে শুরু করে ডাকাতেরা। পুলিশের দাবি, সেই সময়েই ধরা পড়ে যায় দু’জন। কিন্তু বাকিরা পালিয়ে যায়। দ্রুত ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে শহরের চার দিকে মোট ৩৯টি পয়েন্টে নানা চেকিং শুরু করে তারা। বন্ধ করে দেওয়া হয় চন্দননগর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ার সমস্ত ফেরিঘাট। ডাকাতদল যাতে পালাতে না পারে, তার জন্য সতর্ক করা হয় আশপাশের থানাগুলিকে। এর পরেই খবর আসে চুঁচুড়ার তুলোপট্টি থেকে। সেখানে নাকা চেকিংয়ে ধরা প়ড়েছে এক ডাকাত। পুলিশ দেখে রাস্তাতেই সে গুলি চালাতে শুরু করেছিল। যদিও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় শেষে।
পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতদল আগে থেকেই হয়তো এই সংস্থার অফিসের দিকে নজর রাখছিল। সে কারণে মঙ্গলবার, বাজার যে দিন বন্ধ থাকে, সে দিনই হানা দেয় ডাকাতেরা। একটি গাড়ি ও একাধিক মোটর বাইকে করে তারা এসেছিল। ঘটনাস্থল থেকে বাইক ও গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। যদিও স্বস্তির কথা, পুলিশের তৎপরতার কারণে শেষ পর্যন্ত সোনা বা নগদ টাকা, কিছুই নিয়ে পালিয়ে যেতে পারেনি ডাকাতরা। যদিও দু’জন, না তিন জন গ্রেফতার হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে জানায়নি পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।