সংস্কার হবে এই ভবন। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য সরকারের টাকায় শ্রীরামপুর কলেজের ঐতিহাসিক মূল ভবন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। পুরনো আদল বজায় রেখেই ওই কাজ করা হবে।
অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাং ল্যুরা জানান, প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর ধাপে ধাপে টাকা দেবে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে রাজ্য ৩০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে। স্থপতি গোপা সেন কাজের তদারকি করবেন। সব ঠিক থাকলে কাজ শেষ হতে ৩ বছর সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই কাজের জন্য গত ২৭ জানুয়ারি ওই ভবনের সামনে একটি ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠান করা হয় কলেজের তরফে।
উইলিয়াম কেরি, জ্যোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ডের হাত ধরে শ্রীরামপুর কলেজ স্থাপিত হয় ১৮১৮ সালে। তবে, প্রথমে অন্য একটি বাড়িতে পঠনপাঠন চলত। প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন কেরি। তাঁর নেতৃত্বেই ১৮২০ সালে মূল ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। এখানে পড়াশোনা চালু হয় পরের বছর। পরবর্তী দু’শো বছর ধরে নানা ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে দোতলা এই ভবন। দোতলায় রয়েছে বড়সড় একটি হলঘর। তার দু’দিকে শ্রেণিকক্ষ। একতলায় এক দিকে ধর্মতত্ত্বের গ্রন্থাগার। অন্য দিকে, কলা-বাণিজ্য-বিজ্ঞান শাখার গ্রন্থাগার।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটি জীর্ণ হয়ে পড়ে। বছর কয়েক আগে, কলেজের দু’শো বছর উদ্যাপন উৎসব নিয়ে নাগরিক সমাবেশে ভবনটি সংস্কারের কথা ওঠে। কলেজের তরফে এ নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন অধ্যক্ষ। তার পরেই প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘ঐতিহাসিক মূল ভবন সংস্কার করা হবে। পুরনো রূপ বজায় থাকবে। বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী-সহ কলেজের সঙ্গে যুক্ত সকলের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। এটা উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।’’ এ জন্য মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পূর্বতন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
স্থপতি গোপা সেন জানান, আদলে কোনও বদল না করে ওই কাজ হবে। সেই সময়ের প্রযুক্তি এবং সামগ্রী যাতে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়টি মাথায় রাখা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ভবনটি বিশেষ কোনও শৈলীতে তৈরি, বলা না গেলেও এটার অসাধারণ সৌন্দর্য রয়েছে।’’
গঙ্গাপাড়ের মনোরম পরিবেশে এই কলেজ যখন তৈরি হয়, শ্রীরামপুরে তখন ডেনমার্কের উপনিবেশ। কেরি-মার্শম্যান-ওয়ার্ডের হাত ধরে শ্রীরামপুর তথা বিস্তীর্ণ এলাকায় শিক্ষাপ্রসার ঘটে। কলেজটি গড়ে উঠেছিল ডেনমার্ক সরকারের দান করা জমিতে। ১৮২৭ সালে ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডারিকের দেওয়া সনদবলে এই প্রতিষ্ঠান ধর্মতত্ত্বের মর্যাদা লাভ করে। মূল ভবনের সুদৃশ্য লোহার সিঁড়ি রাজা দিয়েছিলেন। ওই সিড়ি আনা হয়েছিল বার্মিংহাম থেকে।