সেই সরকারি নির্দেশ।
বেআইনি ভাবে নিয়োগপত্র পাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীদের (গ্রুপ-ডি) যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে, তাতে হাওড়ার ৫১ জনের নাম আছে। মঙ্গলবার তাঁদের সকলকেই আদালতের চিঠি ধরানো হয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক)-এর কার্যালয় সূত্রে খবর, এ দিন ওই কর্মীদের আদালতের নির্দেশ ধরিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকে স্কুলে এসে নির্দেশের অনুলিপি নিয়ে গিয়েছেন। বাকিদের মেল করে বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ওই অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তবে জেলার অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোনও কর্মীকেই স্কুলে কাজে আসতে নিষেধ করা হয়নি। আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা ইউনিয়ন হাইস্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর নাম রয়েছে ওই তালিকায়। প্রধান শিক্ষক শেখ নইমুদ্দিন বলেন, ‘‘জেলা স্কুল পরিদর্শক আমাদের আদালতের নির্দেশ ওই কর্মীর কাছে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ করতে বলেননি। ফলে ওই কর্মী কাজে আসতেই পারেন।’’ সুদাম ঘোষ নামে চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মীর বাড়ি বাগনানের হিওপ গ্রামে। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছুটি পাওনা আছে। তাই স্কুলে যাইনি। বেআইনি ভাবে চাকরি পাইনি। আইনি পথে লড়ব।’’
বাগনান গার্লস হাইস্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর নাম তালিকায় আছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অমরনাথ চৌধুরী বলেন,‘‘ওই কর্মী স্কুলে এসেছিলেন। তাঁকে আদালতের নির্দেশের অনুলিপি দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁকে স্কুলে আসতে বারণ করিনি। শিক্ষা দফতর থেকে আমাদের এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’’ তবে ওই কর্মীর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা যায়নি।
কয়েক বছর আগে বাগনানের বাঁটুল মহাকালী হাইস্কুলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন শ্যামপুরের সুলতানপুরের মিতালি খাঁড়া। মঙ্গলবারও কাজে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে চিঠি পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সংসারের একমাত্র রোজগেরে মিতালি বলেন, ‘‘প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। কাজেও ফাঁকি দিইনি।’’ আগামী দিনে যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয় তিনি আইনি পথে মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকুমার মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষা দফতর থেকে যা করতে বলা হয়েছিল, সেটাই করা হয়েছে। তবে ওই কর্মীকে স্কুলে আসা বন্ধ করতে বলা হয়নি।’’
হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সিবিআই। তালিকায় নাম রয়েছে ১৬৯৪ জনের। কোনও পদক্ষেপের আগে ওই ১৬৯৪ জনকেই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে চায় হাইকোর্ট। সেই অনুযায়ী জেলার স্কুল পরিদর্শকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। আদালতের নির্দেশের সেই অনুলিপি ওই কর্মীদের হাতে ধরানো হচ্ছে বলে রাজ্য শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। আগামী ২৪ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি রয়েছে।