প্রতিবাদের আঁকা। শ্রীরামপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চমীর সন্ধ্যায় যখন দুর্গাপুজোর মণ্ডপে আলো জ্বলে উঠেছে, তখন চন্দননগরের জ্যোতির মোড়ে এক দল মানুষ গলা ফাটিয়ে স্লোগান তুলছেন। সেই আওয়াজে ধ্বনিত হচ্ছে নারী নির্যাতনের বিচারের দাবি। জোরাল হচ্ছে লড়াইয়ের অঙ্গীকার।
উৎসবে না ভেসে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ পুজোর সময়েও চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল নাগরিক সমাজের একাংশ। সেই প্রতিফলনই মঙ্গলবার পঞ্চমীতে দেখা গেল চন্দননগর এবং শ্রীরামপুরে। তৃতীয়াতেও হুগলির এই দুই শহর দেখেছিল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। আর জি করের সঙ্গে প্রতিবাদে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিশু
হত্যা সহ বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা।
এ দিন বিকেলের পরে চন্দননগরের রথতলা থেকে মিছিল শুরু হয় নাগরিকদের ডাকে। মিছিল শেষ হয় জ্যোতির মোড়ে। সেখানে স্লোগান চলতে থাকে। জমায়েতে ছিলেন শিক্ষিকা অনিন্দিতা মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে, অথচ প্রশাসন কার্যত নিষ্ক্রিয়। বাধ্য হয়ে মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। অন্য উপায় নেই। যখন জীবন বিপন্ন, তখন পুজোই বা কী, উৎসবই বা কী!’’ একই অভিমত জানান নৃত্যশিক্ষিকা সমাদৃতা দত্ত।
এ দিন শ্রীরামপুরের বটতলায় জি টি রোড থেকে ওয়ালশ হাসপাতালের দিকে যাওয়ার রাস্তায় দেওয়ালে প্রতিবাদ লেখা হয়। ঝোলানো হয় ফ্লেক্স। কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, সাধারণ মানুষ। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, উৎসবের সময়েও মানুষের মধ্যে প্রভাব রাখার জন্য এই প্রয়াস।
হুগলির দুর্গাপুজো কার্নিভাল আগামী সোমবার হবে শ্রীরামপুরে স্নানপিড়ি মাঠ থেকে বটতলা পর্যন্ত। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এই উৎসবের প্রতিবাদ করছেন অনেকে। কার্নিভাল বন্ধের আর্জি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে খোলা চিঠি
পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছেন শ্রীরামপুরবাসীর একাংশ। চিঠির বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর নামে কার্নিভালের আড়ম্বর লজ্জা আরও বাড়াবে। তাই কার্নিভালের সিদ্ধান্ত যেন ‘সংবেদনশীলতার সঙ্গে পুনর্বিবেচনা’ করা হয়। সাম্প্রতিক বন্যার
জেরে মানুষের দুর্ভোগের কথাও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, খোলা চিঠির আকারে ওই আবেদন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো হবে ডাকযোগে। লিফলেট আকারে রাস্তায় বিলি করা হবে। শহরের চিকিৎসক, শিক্ষক, লেখক, কবি, সমাজকর্মী সহ নানা স্তরের মানুষ চিঠিতে
সই করেছেন।