প্রস্তুতি: কামারপুকুর নয়নতারা বালিকা বিদ্যালয় খোলার জন্য সাফাই চলছে। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী শুক্রবার থেকে স্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে। রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে কোভিড সুরক্ষা বিধির নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে স্কুলে। অথচ সেই পরিকাঠামো হাওড়া-হুগলি—দুই জেলার অধিকাংশ স্কুলেই নেই বলে অভিযোগ।
স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে শ্রেণিকক্ষে ‘জ়িগজ়্যাগ’ কিংবা ‘এক্স’ পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রীরা বসবে। ‘জ়িগজ়্যাগ’ মানে প্রথম বেঞ্চে বাঁ দিকে একজনই মাত্র বসবে। পরের বেঞ্চে ডান দিকে একজন বসবে। ফের পরের বেঞ্চে বাঁ দিকে একজন। আবার ‘এক্স’ পদ্ধতিতে প্রথম বেঞ্চের দুদিকে ২ জন। পরের বেঞ্চে মাঝে একজন। এবং তার পরের বেঞ্চে ফের দু দিকে দু’জন। এই ব্যবস্থায় এক একটা শ্রেণিকক্ষে ২০ থেকে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী বসতে পারবে। গ্রামের দিকে তুলনামূলক ছোট স্কুলগুলোর অধিকাংশরই শ্রেণিকক্ষের যেমন অভাব আছে, তেমনি শিক্ষকেরও ঘাটতি আছে।
গোঘাটের বাঘারবার্ড হাইস্কুলের নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী ২৭০ জন। শ্রেণিকক্ষ আছে ১২টি। প্রধান শিক্ষক সৌম্যজিৎ মাইতির অভিযোগ, “এক একটা ঘরে ১৬ থেকে ২০টির বেশি বেঞ্চ ঢোকানো যাচ্ছে না। ‘জ়িগজ়্যাগ’ পদ্ধতি মেনে চলার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই।” আবার 'এক্স' পদ্ধতি মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের বসানো গেলেও বিভিন্ন শ্রেণির ইউনিট ভাঙতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘নবম শ্রেণির একটা ইউনিটকে ৩টি ইউনিটে ভাগ করতে হচ্ছে। এ দিকে আমাদের অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা এবং জীবনবিজ্ঞানে একজন করে শিক্ষক। রসায়নের শিক্ষকই নেই। একজন শিক্ষককে একই দিনে, একই বিষয়ে তিনটে ইউনিট ছাড়াও রসায়নও পড়াতে হবে। পঠনপাঠন নিয়ে রুটিন করতেই সমস্যায় পড়েছি।’’
আরামবাগের বড়ডোঙ্গল রমানাথ ইনস্টিটিউশনে শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকের কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের বিন্যাস নিয়ে সমস্যা। ওই স্কুলের দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২৫৫ জন। তাদের ৮৫ জন করে ইউনিট ভাগ করে তিনটি সেকশনে পড়ানো হত। এখন সেটা আরও ভেঙে ১২টা ইউনিট করতে হচ্ছে।
স্কুলের বাংলার শিক্ষক দীনবন্ধু ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের স্কুলে শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকের অভাব নেই। আমরা বাংলার শিক্ষকই আছি ৬ জন। উঁচু ক্লাস-নিচু ক্লাস ভাগ করে পড়ানো চলত। এখন কোভিডকালীন ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক সারা দিনে একই বিষয়ে ১২টা ক্লাসে পড়ানো অসম্ভব। আবার একই বিষয়ে একাধিক শিক্ষক পড়ালেও ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধা। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে যাঁরা এতদিন নিচু ক্লাসগুলোতে পড়িয়েছেন, তাঁদের উঁচু ক্লাসে পড়াতেও অসুবিধা হবে।”
পুরশুড়া ভাঙামোড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল রক্ষিত অবশ্য বলেছেন, “আমাদের ৪৬টা শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠনের সমস্যা থাকবে না। তবে ছাত্ররা অন্যের টিফিন যেন না খায়, বা অন্যের ব্যাগে যাতে হাত না দেয়—এ সব স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজরদারির বিষয়টা ভাবাচ্ছে।”
পঠনপাঠন ছাড়াও স্কুল স্যানিটাইজেশন এবং ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়েও অনেক স্কুল সংশয় প্রকাশ করেছে। এই খাতে সরকারি অনুদান পাওয়ার কথা থাকলেও সেই অনুদান কত এবং কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, তা নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুলে প্রবেশের মুখে ছাত্র-ছাত্রীদের থার্মাল গান দিয়ে চেক করতে হবে, প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে। কারও মাস্ক না থাকলে তাকে মাস্ক দিতে হবে, বারবার হাত ধোওয়ার জন্য স্যানিটাইজ বা সাবান দিতে হবে। স্কুলের শ্রেণিকক্ষ-সহ সমস্ত স্কুল চত্বর সপ্তাহে দু’বার স্যানিটাইজ করতে হবে। স্কুলগুলো আপাতত নিজেদের তহবিল থেকে থার্মাল গান, মাস্ক, সাবান, ফিনাইল এবং ব্লিচিং পাউডার কিনেছে। হুগলি স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, আগামী দু-একদিনের মধ্যেই স্কুলগুলোতে সরকারি অনুদানের অর্থ (৪ হাজার টাকা) পৌঁছে যাবে।
হাওড়ার আন্দুলের মহিয়াড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেন বলেন, “স্কুল খোলার আগে সমস্ত ক্লাসরুমে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। ক্লাসরুমে ঝুল ঝাড়া হচ্ছে। স্কুল চত্ত্বরে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে। এর জন্য এখনও পর্যন্ত সরকার কোনও অনুদানের কথা বলেনি। এখন আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলে এই খরচ করেছি। স্কুলে মোট ২২টি শ্রেণিকক্ষ আছে। এখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ুয়াদের বসানো হবে। সকল শিক্ষক শিক্ষিকা মিলেই ক্লাস নেওয়া হবে।”