গোঘাট-২ ব্লকের বিডিওর কাছে স্মারকলিপি জমা বিজেপির। নিজস্ব চিত্র
হুগলি জেলায় আবাস প্লাসের তালিকা থেকে ‘অযোগ্য’দের বাতিল করা হয়েছে। কতজন বাড়ি পাবেন, সেই তালিকাও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে গত ২৪ ডিসেম্বর। তারপর থেকে যাঁরা ‘বঞ্চিত’ হলেন বা যাঁদের তালিকায় নাম থাকল না, তাঁদের লাগাতার ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এবং ব্লকে। বিডিওরা ব্লক অফিসে ‘ড্রপ বক্স’ রেখে ফের আবেদন করতে বলে তা সামলানোর চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার আরামবাগ ব্লকের মাধবপুর এবং হরিণখোলা-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখানোর পর প্রায় ৫০০ আবেদন জমা পড়েছে। বুধবার সেখানে বিক্ষোভ না হলেও প্রায় ৪৫০ আবেদন পড়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। একই ভাবে গোঘাটের দু’টি ব্লক, পুরশুড়া, খানাকুলের দু’টি ব্লক, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া, বলাগড়, হরিপাল— সর্বত্রই আবেদন জমা পড়ছে।
বিডিওদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন জেলার ১৮টি ব্লকে গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০টি আবেদন জমা পড়ছে। মঙ্গলবার বলাগড় ব্লকের একতারপুর পঞ্চায়েতের দ্বারপাড়া গ্রামের দিনমজুর হাফিজা বিবি বিডিওর কাছে বাড়ির আবেদন করেছেন। ২৩ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে প্রতিবন্ধী। আবাস প্লাসের তালিকায় আবেদন করেও নাম বাদ গিয়েছে। সংসারে অভাব থাকায় ঘর করতে পারিনি। এ বার সমীক্ষার সময় আশা জেগেছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতে গিয়ে শুনলাম তালিকায় নাম নেই। আবার ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করলাম। কী হবে জানি না।”
এ রকমই গোঘাট-২ ব্লকের পশ্চিমপাড়া পঞ্চায়েতের রামানন্দপুর গ্রামের লক্ষ্মী বিবি, আরামবাগের মাধবপুর পঞ্চায়েতের মাধবপুর গ্রামের বিমলা মালিকরা ব্লকে আবদেন করলেও ভবিষ্যৎ জানেন না।
এই সব আবেদনের ভবিষ্যৎ কী? তা ব্লক প্রশাসনের কাছেও স্পষ্ট নয়। গোঘাট-২ ব্লকের বিডিও দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “কেউ আবেদন করতে চাইলে তা ড্রপ বক্সে ফেলতে বলছি। তা সযত্নে গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। ফের আবাস প্লাস পোর্টাল খোলা হলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” একই কথা বলেছেন আরামবাগের বিডিও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলাগড়ের বিডিও নীলাদ্রি সরকার বলেন, “আবেদনগুলিরযৌক্তিকতা আছে কি না যাচাই করা হবে।’’
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তালিকায় থাকা মোট ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৫১৩টি আবেদন যাচাই করে ১ লক্ষ ৭৪টি আবদেনকে উপযুক্ত চিহ্নিত হয়েছে। প্রথম দফায় জেলার বরা্দ্দ অনুযায়ী ১৮ টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েতের ৫৫ হাজার উপভোক্তা বাড়ি পাবেন বলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তৈরি তালিকাও ব্লক অফিসগুলিতে টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ দিকে, বাড়ি না পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি ওই তালিকায় ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সিপিএম এবং বিজেপির বিক্ষোভ-স্মারকলিপি জমাও অব্যাহত। বুধবার গোঘাট-২ ব্লকে বিজেপির পক্ষে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়।