আবাস যোজনা ঘরের সানসেট ভেঙে পড়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি প্রকল্পে ঘর তৈরি হচ্ছে। তারই দেওয়ালে জল দিতে গিয়ে সানসেট ভেঙে জখম হলেন গৃহকর্তা। বৃহস্পতিবার সকালে হাওড়ার উলুবেড়িয়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। সরকারি প্রকল্পের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। আবাস যোজনা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধীরা খড়্গহস্ত। এই ঘটনাতেও একই অভিযোগ তাঁদের মুখে।
তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার শেখ সেলিমও। উপ পুরপ্রধান ইনামুর রহমান বলেন, ‘‘উপভোক্তা বা স্থানীয় কাউন্সিলর পুরসভার কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে বর্তমান ও পূর্বতন কাউন্সিলরের (দু’জনেই তৃণমূলের) মধ্যে তরজা বেধেছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে ঘরের জন্য বরাদ্দ ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা (এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা উপভোক্তার)। এই প্রকল্পে বাড়ি পান ওই এলাকার বাসিন্দা, বছর ষাটেকের স্বপন প্রামাণিক। তিনি দিনমজুর। স্বপন জানান, স্থানীয় কাউন্সিলরের কথায় সেলিমকে কাজের বরাত দেন। কিন্তু প্রায় তিন বছরেও কাজ হয়েছে মাত্র সানসেট পর্যন্ত। এ দিন দেওয়ালে জল দিতে সানসেটে উঠতেই হুড়মুড়িয়ে সেটি ভেঙে পড়ে।
স্বপন বলেন, ‘‘তিন বছরেও বাড়ি শেষ করলেন না ঠিকাদার। নানা অজুহাতে দিন কাটিয়েছেন। অনেক জোরাজুরিতে দিন পনেরো আগে সানসেট ঢালাই করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ছাদ ঢালাইয়ের কথা। তাই দেওয়ালে জল দিচ্ছিলাম। কেমন জিনিস দিয়ে কাজ করেছে যে, ও ভাবে ভেঙে পড়ল! এই ভাবে নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে ঘর তৈরি হলে তো ছাদ চাপা পড়ে মরব।’’ তাঁর আক্ষেপ, ঘর না হওয়ায় স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ত্রিপলের ছাউনির নীচে শীতে জুবুথুবু হয়ে থাকতে হচ্ছে।
বর্তমান কাউন্সিলর বীণা প্রামাণিক বলেন, ‘‘ওই ঘরের অনুমোদন হয়েছিল বিগত বোর্ডে। তখনকার কাউন্সিলর স্বপন ঘোড়ুই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।’’ স্বপনের বক্তব্য, ‘‘আমার সময়ে ওই ঘরের অনুমোদন হলেও বর্তমান কাউন্সিলর দেখভাল করছেন। তাই এই সব বলে লাভ হবে না।’’ ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পের কাজে সামগ্রীর মান নিয়ে এলাকার অনেকেই অভিযোগ করেন। বীণার দাবি, অভিযোগ মিথ্যা।
তবে বিরোধীরা মুখ খুলতে ছাড়েননি। হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপি সভাপতি অরুণ উদয় পালচৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা বার বার বলেছি, আবাস যোজনার টাকা চুরি করছেন তৃণমূলের নেতারা। এখানেও তা প্রমাণিত হল। নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে কাজ করার জন্য ঘরে ঢোকার আগেই ভেঙে পড়ছে।’’
ঠিকাদার শেখ সেলিমের দাবি, ‘‘নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়নি। মিস্ত্রির ভুলে এটা হয়েছে। আমরা ওই সানসেট ফের তৈরি করে দেব, যাতে কোনও সমস্যা না হয়। কাজের টাকা ঠিকঠাক না পাওয়ার জন্যই ঘর তৈরি করতে দেরি হচ্ছে।’’ পুর কর্তৃপক্ষেরও দাবি, কেন্দ্র সঠিক সময়ে টাকা না পাঠানোয় কাজে বিলম্ব হচ্ছে।