Chinsurah

নিকাশির হাল ফিরল না এখনও

চুঁচুড়া বিধানসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা যে তিমিরেই, ঘুরলেই মালুম হয়। বৃষ্টি হলেই মজা নালা উপচে রাস্তায়, বাড়িতে জল জমা পরিচিত দৃশ্য।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ০৬:৫২
Share:

সংস্কার হয়েছে রবীন্দ্রভবন। ছবি: তাপস ঘোষ।

এই কেন্দ্রে জেলা সদর। প্রশাসন, পুলিশের তাবড় কর্তাদের অফিস, জেলা আদালত, জেলা হাসপাতাল— সব এখানে। কিন্তু নাগরিক পরিষেবা কতটা উন্নত হয়েছে গত এক দশকে? বিধানসভা ভোটের মুখে এই প্রশ্ন ভাসছে রাজনীতির আকাশে।

Advertisement

চুঁচুড়া বিধানসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা যে তিমিরেই, ঘুরলেই মালুম হয়। বৃষ্টি হলেই মজা নালা উপচে রাস্তায়, বাড়িতে জল জমা পরিচিত দৃশ্য। এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভও বিস্তর। জঞ্জাল প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা মান্ধাতা আমলের। খেলার স্টেডিয়াম নেই। বেহাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না হওয়া, দুর্নীতি— এ সব অভিযোগও কম নয়। সব মিলিয়ে বিধায়ক অসিত মজুমদারের গলায় ব্যর্থতার মালা পরাতে বিরোধীরা তৈরি।

তবে উন্নয়নের ফিরিস্তি হাজির করে সেই অভিযোগ ফুৎকারে ওড়ানোর চেষ্টা করছে শাসক দল। তাদের দাবি, বাম আমলের ৩৪ বছরের সার্বিক ব্যর্থতা সামলে উন্নয়ন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে চুঁচুড়া অনেক এগিয়েছে। দাবির স্বপক্ষে তাদের যুক্তি, বাম আমলে জেলা হাসপাতালে আইসিসিইউ, এসএনসিইউ ছিল না। এখন আছে। সিটি স্ক্যানের মতো জরুরি পরীক্ষাও হচ্ছে। পিপিপি মডেলে এই হাসপাতালে মেডিক্যাল কলেজের কথা এগোচ্ছে।

Advertisement

বিদায়ী বিধায়ক অসিতবাবুর দাবি, ফুটবলের জন্য আইএফএ স্বীকৃত স্টেডিয়াম করার মতো জায়গা মেলেনি। তবে, চুঁচু়ড়া ময়দানের আমূল সংস্কার করা হয়েছে। গঙ্গার ধারে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কাজ চলছে। তাঁর বক্তব্য, ২০১১ সালে তিনি যখন বিধায়ক হলেন, রাস্তাঘাট বা পানীয় জলের দুরবস্থা ছিল। কারিগরি জনস্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল, এলাকাভিত্তিক টিউবওয়েলের ব্যবস্থা হয়েছে। বহু রাস্তা সংস্কার হয়েছে। আলো বসেছে। সরস্বতী নদী সংস্কার হওয়ায় নিকাশির উন্নতি হয়েছে। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে। নতুন দমকল কেন্দ্র হয়েছে। সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্র রবীন্দ্রভবন ঢেলে সংস্কার করা হয়েছে। অসিতের কথায়, ‘‘সাড়ে ন’বছরে আর কত করা যায়! তা-ও কোভিডের জন্য অনেক কাজ ব্যাহত হয়েছে।’’

হালফিলে রবীন্দ্রনগরের দুষ্কৃতী টোটন বিশ্বাসের ডেরায় পুলিশের আক্রান্ত হওয়া, পরে সেখানে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার, ব্যান্ডেল স্টেশনে প্রকাশ্য দিবালোকে তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন বা এক যুবককে নৃশংস খুন— এই সব ঘটনা তুলে ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হিসেবেই দেখাতে চাইছেন বিজেপি এবং বাম নেতৃত্ব। তবে, তৃণমূলের দাবি, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও প্রতি ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। চুঁচুড়ায় দুষ্কৃতীরাজ ‘বাম আমলের আমদানি’ বলে দাবি করে অসিত বলছেন, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে তিনি বরাবরই সরব থেকেছেন। পুলিশের মধ্যস্থাতায় দুষ্কৃতী দমনের চেষ্টা করেছেন। তার ফলও মিলেছে। পুকুর ভরাটের মতো অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছেন। চুঁচুড়ায় এখন তোলাবাজি হয় না বলেও তাঁর দাবি।

বিজেপি নেতা স্বপন পাল, সুরেশ সাউদের অবশ্য বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধরাশায়ী হতেই মানুষের সহানুভূতি আদায়ে অসিত রাস্তায় নামেন। তা ছাড়া, পুকুর ভরাট নিয়ে তাঁর অভিযোগই প্রমাণ করে কী ভাবে পুকুর চুরি হয়েছে। স্বপন বা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রূপচাঁদ পাল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রশাসনিক সভায় টিভিতে দেখা গিয়েছিল, স্টেডিয়ামের জন্য টাকার দাবি জানানোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কাটমানি’র কথা বলেছিলেন তাঁরই দলের এই বিধায়ককে। তৃণমূলকে অশান্তিতে রাখছে চুঁচুড়া পুরসভায় নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগও। জলঘোলা হওয়ায় রাজ্য সরকার ওই প্যানেলই বাতিল করে দেয়। রূপচাঁদবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখলেই চুঁচুড়া অনেক এগিয়ে যেত। তা না করে পিছিয়ে দিয়েছে।’’

অসিত অবশ্য মচকাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিছুই স্বচ্ছ ভাবে করেছি। দু’বারেই বিধায়ক তহবিলের সব টাকা উন্নয়নে খরচ করেছি। অন্যান্য দফতরের টাকাতেও অনেক কাজ হয়েছে। সুফল পাচ্ছে মানুষ। আমার কাজ মানুষই বিচার করবেন।’’

মানুষের উপরে বিচারের গুরুদায়িত্ব ছাড়ছে যুযুধান সব পক্ষই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement