national games

ফুটবলে বাংলার জয়ে অন্যতম কারিগর হুগলির ত্রিমূর্তি

২১ বছরের দীপেশের বাড়ি বলাগড়ের একতারপুরে। বাসুদেব এক বছরের বড়। তিনি ওই ব্লকেরই মহীপালপুরে থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলাগড় শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৬
Share:

ত্রয়ী: বাসুদেব, দীপেশ ও তারক। নিজস্ব চিত্র

এগারো বছরের খরা কাটিয়ে জাতীয় গেমসে ফুটবলে শিরোপা জিতলেন বাংলার ছেলেরা। গত মঙ্গলবার গুজরাতের আমদাবাদে ইক্কা এরিনা স্টেডিয়ামে ফাইনালে কেরলকে দুরমুশ করে দেয় বাংলা। দলের ট্রফি জয়ের অন্যতম কারিগর হুগলির তিন জন— দীপেশ মুর্মু, বাসুদেব মান্ডি এবং তারক হেমব্রম। বাড়ি ফিরে সাফল্যের কথা শোনালেন আদিবাসী পরিবারের ওই তিন সন্তান।

Advertisement

২১ বছরের দীপেশের বাড়ি বলাগড়ের একতারপুরে। বাসুদেব এক বছরের বড়। তিনি ওই ব্লকেরই মহীপালপুরে থাকেন। দু’জনের পরিবারেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মিল আরও আছে, ছোট থেকেই ফুটবল তাঁদের ধ্যানজ্ঞান। ২০১৩ সালে একসঙ্গেই জিরাট কলোনি মাঠে স্বপন দাসের কাছে তাঁদের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু। বলাগড় থানা লিগে খেলেন একতারপুরের তালতলা বাসনা অ্যাোকাডেমির হয়ে। পরে হুগলি স্পোটস অ্যাকসোসিয়েশনের সদস্যন তথা বলাগড় থানা স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রদীপ দাস দু’জনকে কলকাতার ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাবের কর্ণধার নবাব ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেন। ’১৮ সালে ইউনাইটেড স্পোর্টিংয়ে যোগ দেন দুই বন্ধু।

দীপেশের বাবা শম্ভু এবং মা পার্বতী খেতমজুর। টালি আর অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে দিনযাপন। অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণিতেই দীপেশের পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। তবে, ফুটবল থামেনি। গত দু’বছর জেলা ও রাজ্যস্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দাপিয়ে খেলেছেন। ভাল পারফর্ম্যান্স বাংলা দলে ঢুকিয়ে দেয় এই মিডফিল্ডারকে। দীপেশের চোখে স্বপ্ন, দেশের হয়ে খেলবেন। সেই দিনের প্রতীক্ষায় মা-বাবাও। প্রতিবেশী শেখ জালালউদ্দিন বলেন, ‘‘দীপেশ আমাদের গ্রাম তথা বলাগড়ের গর্ব। আশা করব, ফুটবল ওঁকে আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। আগামী দিনে দেশের জার্সি গায়ে উঠবে। বলাগড়ের মুখ আরও উজ্জ্বল হবে।’’

Advertisement

মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোননি বাসুদেবও। কামারপাড়া উচ্চ বিদ্যািলয়ে নবম শ্রেণিতে উঠে পড়া ছেড়ে দেন। বাবা কার্তিক মান্ডি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। সংসারে নিত্য অনটন। কার্তিক বলেন, ‘‘টাকার অভাবে ছেলেটাকে অনেক সময় খেলার সরঞ্জাম কিনে দিতে পারিনি। গত দু’বছর ছেলে জেলা ও রাজ্যিস্তরে খেলেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলা দলের হয়ে ছেলে সুযোগ পেয়েছে, ভাবতেই পারছিলাম না। ওকে বলেছি, এখানে থামলে চলবে না। আরও খাটতে হবে। দেশের হয়ে খেলতে হবে।’’ বলতে বলতে চিকচিক করে ওঠে ফুটবল মাঠের রাইট উইঙ্গার ছেলের বাবার চোখ। বাসুদেব জানান, খেলার মাঠে জান লড়িয়ে দেবেন।

তারকের বয়স ২০ বছর পেরিয়েছে। দীপেশ, বাসুদেবের পাশে তিনিও খেলেন ইউনাইটেড স্পোর্টিংয়ে। পান্ডুয়া ব্লকের খন্যানের রাধানগরে তাঁর বাড়ি। তারক জানান, পাড়ার মাঠ থেকে তাঁর ফুটবল প্রেম। ফুটবলের অআকখ শেখা সামসুল সরকারের কাছে। সেখান থেকে ব্যান্ডেলের বাণীচক্র ক্লাব। সেখান থেকে কোচ অশোক মণ্ডলের মাধ্যমে ইউনাইটেড স্পোর্টিংয়ে। তারকও মাঝমাঠে খেলেন। তিনি বলেন, ‘‘দীপেশ, বাসু (বাসুদেব) আর আমি অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছি। মাঠে আমাদের বোঝাপড়া খুব ভাল।’’

তারকের বাবা পাগান হেমব্রম সরকারি কর্মী। মা ঠাকুরমণি গৃহবধূ। তারক মাধ্যমিক পাশ করেছেন। প্রাইভেটে চলছে পরবর্তী পড়াশোনা। বাংলা ফুটবলে তারকের আদর্শ লালকমল ভৌমিক। বিশ্ব ফুটবলে তিনি ইনিয়েস্তার ভক্ত। মনে পুষেরাখা স্বপ্নের কথা উজাড় করে বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে দেশের হয়ে মাঠে নামতে চাই। খেলতে চাই আইএসএলেও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement