বৃক্ষরোপণই সার, দেখভালের অভাব সর্বত্র
Plantations

অকালেই পঞ্চত্বপ্রাপ্তি সবুজের

ওই পঞ্চায়েত এলাকারই চটি থেকে শ্রীপুর, দশঘড়া থেকে ভূতির খাল পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও একই হাল।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৭:২৫
Share:

সবুজশ্রী প্রকল্পে এক বছর আগে লাগানো নারকেল গাছ (বাঁ দিকে)। বর্তমানে ভেঙে পড়েছে বেড়া, গাছও মৃতপ্রায়। কামারপুকুর-বেঙ্গাই রোডের পাশে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

কোথাও শুধু বেড়াটুকু টিকে আছে। কোথাও তা-ও নেই। গাছ কোথাও হাওয়া, কোথাও মৃতপ্রায়।

Advertisement

গত বছর ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে গোঘাট-২ ব্লকের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের কামারপুকুর চটি থেকে বেলেপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার দু’দিকে অন্তত ৯০০ নারকেল গাছ লাগানো হয়েছিল ‘সবুজমালা’ কর্মসূচিতে। টিকে রয়েছে মাত্র ৩০টি গাছ। বাকি গাছ উধাও। অথচ, প্রকল্পের বোর্ড রয়েছে।

ওই পঞ্চায়েত এলাকারই চটি থেকে শ্রীপুর, দশঘড়া থেকে ভূতির খাল পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও একই হাল। অবশ্য সরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণের এই বেহাল পরিণতি শুধু ওই পঞ্চায়েতেই নয়, জেলার প্রায় সর্বত্রই ছবিটা একই রকম। প্রতি বছর সর্বত্র ঘটা করে বৃক্ষরোপণ হয়। কিন্তু দেখভালের অভাবে অচিরেই বেশিরভাগ গাছের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে। কোথাও চুরি হয়, কোথাও গরু-ছাগলে খায়, কোথাও আবার এমনই গাছ মরে যায়। গত বছর আমপানে এই জেলার বহু গাছ উপড়ে গিয়েছিল। তার পরেও গাছ বাঁচানেোর সেই উদ্যোগ কোথায়?

Advertisement

বছরে কোথায় কত গাছ লাগানো হচ্ছে, তার হিসেব রয়েছে প্রশাসনের কাছে। কিন্তু তার মধ্যে কত গাছ বেঁচে রয়েছে, তার হিসেব নেই। বিভিন্ন ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকরা স্বীকার করছেন, ১০০ দিনের কাজে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে শ্রমদিবস বাড়ানো ছাড়া আর বিশেষ লাভ হয়নি। প্রতি বছর যা গাছ লাগানো হচ্ছে তার ৫% দেখা যাচ্ছে না। বাস্তব অবস্থা বিচার না-করেই স্রেফ শ্রমদিবস বাড়াতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসময়ে গাছ লাগানোর প্রশাসনিক নির্দেশ থাকে। গাছ বাঁচানো যায় না।

কামারপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান তপন মণ্ডল মানছেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে আমরা মাস ছয়েক তদারকি করলেও শেষরক্ষা হয়নি। বেড়া ভেঙে গরু-ছাগলে গাছ নষ্ট করেছে। ভাল জাতের নারকেল গাছ হওয়ায় কিছু চুরিও হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকল্পে গড়ে ১০-১৫ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়। ১০ শতাংশও থাকে না। স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পটা বিধ্বস্ত।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বৃক্ষরোপণ তথা ‘সবুজমালা’ অভিযানের অগ্রগতি দেখাশোনার জন্য এবং যাতে অন্তত ৯০ শতাংশ গাছ বাঁচে, সেই লক্ষ্যে ‘আবাস-বন্ধু’দেরই ‘সবুজ মিত্র’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। চুক্তি ছিল, তাঁরা বৃক্ষরোপণ থেকে শুরু করে নিয়মিত ভাবে পাঁচ মাস গাছগুলির তদারকি বা গাছ বাঁচিয়ে রাখতে স্থানীয় মানুষকে অনুপ্রাণিত করবেন। এ জন্য তাঁরা মাসে দু’হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক পাবেন। কিন্তু তাঁরা কাজ করেননি বলে অভিযোগ। এ বার সেই ব্যবস্থাটা তুলে দেওয়া হয়েছে।

অথচ, একটু দেখভাল করলেই যে বেশির ভাগ গাছ বেঁচে যায়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ রয়েছে কামারপুকুর পঞ্চায়েত এলাকাতেই। সেখানকার সাতবেড়িয়া আশ্রম থেকে আমোদর নদের পাড় বরাবর ১৫০০ ইউক্যালিপটাস গাছের চারা লাগানো হয়েছি। তার মধ্যে ১১০০ গাছ বড় হয়ে গিয়েছে স্থানীয় মানুষের সচেতনতায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement