Cancer Hospital

Chandannagar: ক্যানসার হাসপাতালে পরিষেবার দাবিতে জনস্বার্থ মামলা

অভিযোগ, এই হাসপাতালে বর্তমানে এক চিকিৎসক এলেও নিয়মিত চিকিৎসা মেলে না। ক্যানসার নির্ণয়ের কাজও কার্যত বন্ধ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৬:৫৫
Share:

চন্দননগরের রূপলাল নন্দী মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতাল।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা চন্দননগরের রূপলাল নন্দী মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতাল গণ-আন্দোলনের জেরে ফের চালু হয় তিন বছর আগে। দাবি ছিল, ধাপে ধাপে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ার। হয়নি। উল্টে, হাসপাতালটি কার্যত উঠতে বসেছে বলে অভিযোগ। পুরোদস্তুর পরিষেবার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা এই হাসপাতাল নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে।

Advertisement

অভিযোগ, এই হাসপাতালে বর্তমানে এক চিকিৎসক এলেও নিয়মিত চিকিৎসা মেলে না। ক্যানসার নির্ণয়ের কাজও কার্যত বন্ধ। চন্দননগর পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরের হেলদোল নেই। স্থানীয়দের একাংশের ক্ষোভ, রাজ্য সরকার ক্লাবের পুজোয় কোটি কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে। অথচ, ক্যানসার রোগী চিহ্নিতকরণে যে হাসপাতাল দিশা দেখাতে পারত, তার পরিকাঠামো তিমিরে।

চন্দননগরের কলুপুকুরের বাসিন্দা রাজেন্দর ঠাকুর সেলুন চালান। গলায় ক্যানসার। নিজের শহরে চিকিৎসা না পেয়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েকে ফেলে তিনি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে দৌড়চ্ছেন। গত বছর স্ত্রী ক্যানসারে মারা গিয়েছেন।

Advertisement

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আইন সহায়তা কেন্দ্র’-এর কর্ণধার, সমাজকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের চিঠির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখেছিল। তারপরেও তেমন হেলদোল দেখিনি রাজ্যের তরফে। পুরসভাও নির্বিকার। ক্লাবে পুজোর জন্য রাজ্যের টাকা আছে। কিন্তু, ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’’ মেয়র রাম চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘হাসপাতালটি পুরসভার নয়। খোঁজ নিয়ে বিশদে জানাব।’’

হাসপাতালটির দুর্দশা ঘোচাতে স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ বসুরায় এবং আইন সহায়তা কেন্দ্রের তরফেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে হাই কোর্টে। সূত্রের খবর, এখানে পরিষেবা নিয়ে কী পরিকল্পনা, চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের কাছে তা জানতে চেয়েছে আদালত।

প্রসঙ্গত, এক সময় কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের পরেই এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ছিল। অন্তর্বিভাগ ছিল। কেমোথেরাপি দেওয়া হত। মাঝে বহু বছর বন্ধের পরে এলাকাবাসীর আন্দোলনের জেরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল এবং রাজ্য সরকারের কর্তারা ২০১৯ সালে হাসপাতালটি চালানো নিয়ে যৌথ কর্মসূচি স্থির করেন। চিত্তরঞ্জনের শাখা হিসেবে ওই বছরেই ফের চিকিৎসা শুরু হয়। সাত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ করা হয়। ২০ শয্যার অন্তর্বিভাগ, কেমোথেরাপি, রেডিয়োলজির পরিকাঠামো চূড়ান্ত হয়। ঠিক হয়, চন্দননগর পুরসভা ক্যানসার রোগী চিহ্নিতকরণে প্রচার করবে পুর-স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে। কিন্তু, পরিকল্পনাই সার। ফল ভুগছেন অসুস্থরা।

করোনার সময় পরিষেবা বন্ধ করে হয়ে যায়। ভবনটিকে করোনা সংক্রমিতদের জন্য ‘সেফ হোম’ করা হয়। বছর খানেক আগে সপ্তাহে দু’দিন রোগ শনাক্তকরণ, এক দিন ‘গাইনোলজিক্যাল অঙ্কোলজি’ পরিষেবা চালু হয়। দাবি ওঠে, অবিলম্বে অন্তর্বিভাগ, কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি প্রভৃতি বিভাগ চালুর। আন্দোলনকারীদের আক্ষেপ, দাবি পূরণ দূর অস্ত, বহির্বিভাগই চলছে নামেই। গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল তথা গবেষণার জায়গা কার্যত পড়ে আছে।

প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘গণ-আন্দোলনের জেরে একটা বন্ধ হাসপাতাল চালু হল। হাজারো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল। কিন্তু, কাজের কাজ হল না। কিছু পরিষেবা চলছে খাতায়-কলমে।’’ প্রদীপবাবু জানান, তাঁরা জেনেছেন, চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল থেকে ইদানীং জটিল ক্যানসার রোগীদের এখানে পাঠানো হচ্ছে। ক্যানসার নিরাময়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁদের দেখভাল করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement