ভোটের জন্য বাস অমিল। শুক্রবার বিকালে ধুলাগড় টল প্লাজার সামনে অপেক্ষারত যাত্রীরা। ছবি: সুব্রত জানা।
বাসের ভিতরের ভাড়া ৬০০ টাকা। ছাদের জন্য ৩০০ টাকা। আসলে ভাড়া ১৮০ টাকা। কিন্তু, সে সবের তোয়াক্কা না করে দরজার পাশের আসনে বসা ব্যক্তি নিজের ইচ্ছে মতো টাকা নিয়ে টিকিট দিচ্ছেন। তবুও সেই টিকিটেই দূরপাল্লার যাত্রীদের বাড়ি ফেরার হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে।
যাত্রীদের আগেই জানানো হয়েছে, অধিকাংশ দূরপাল্লার বাস হাওড়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। আর বাস আসবে কি না, ঠিক নেই। ওই ঘোষণা শুনেই বাসে উঠতে মরিয়া হন যাত্রীদের অধিকাংশ। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টেয় এটাই ছিল পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিনে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন দূরপাল্লার বাস টার্মিনাসের চিত্র। ভোটের কাজে বাস তুলে নেওয়ায় দিনভর নাজেহাল হয়েছেন মানুষ।
অভিযোগ, হাওড়ার দূরপাল্লার বাস স্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে ভাড়া নিয়ে জুলুমবাজি চলার। দুপুরে দেখা গিয়েছে, ওই বাসস্ট্যান্ড প্রায় ফাঁকা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর রুটের ৩টি বাস দাঁড়িয়ে। অথচ অপেক্ষায় থাকা যাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনশো। সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বহু মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। অনেকে দল বেঁধে মালবাহী গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিয়েছেন।
সেই ভিড়ের মধ্যে চন্দ্রকোনাগামী বাসের সামনে ২০০ টাকার নোট হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন কলেজ ছাত্রী মৌমিতা দাস। মৌমিতা বলেন, ‘‘অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছি। তিন গুণ ভাড়া চাইছে। তাও দিতে রাজি আছি। কিন্তু ভিড়ে তো এগোচ্ছেই না।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার যাওয়ার জন্য স্ত্রী ও ৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোটের আগে বাড়ি ফিরতে প্রতি বারই সমস্যা হয়। তবে আগে ভাড়া নিয়ে এ ভাবে জুলুমবাজি হয়নি।’’ কেক কিনে ফিরতে গিয়ে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা দেবব্রত দাস। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেকটা কিনে বিপাকে পড়েছি। সুযোগ বুঝে বাসও দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া চাইছে। তাতেও রাজি, কিন্তু ভিড়ে কেক নিয়ে উঠব কী করে?’’
বাস যে কম চলছে তা মানছেন হাওড়া-দিঘা বাসস্ট্যান্ডের পরিচালক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত গগন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন যেখানে ১৪০টা বাস চলে, সেখানে আজ চলছে ৮৩টা। এত যাত্রী তাই সামলানো যাচ্ছে না। কিন্তু, বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ কেউ করেননি। করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’’ এত বাস কমার কারণ কী? হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘ভোটের জন্য ৭৫০টির মতো বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই এই অবস্থা।’’