বড়দিনের কার্নিভাল, হাওড়ায়। —ফাইল চিত্র।
কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের মতো হাওড়ায় প্রথম বার বড়দিনের কার্নিভাল ঘিরে যে ঘটনা বৃহস্পতিবার ঘটেছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার মানুষ। শহরে প্রথম হওয়া একটি সুশৃঙ্খল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের দ্বন্দ্ব ঘিরে নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ বহু বাসিন্দারই। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। শুক্রবার বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলার পরে উঠে এসেছে, তাঁরা চান, এমন অনুষ্ঠান শহরে আরও হোক। তবে, তা যেন হয় রাজনীতির দলীয় কোন্দলকে বাইরে রেখে। সকলেরই মত, রাজ্যের এক মন্ত্রীর হাতে যে ভাবে প্রকাশ্যে তাঁরই দলের পুরপ্রধানকে হেনস্থা হতে দেখা গিয়েছে, তা হাওড়ার জন্যই লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই ঘটনায় মারধরের অভিযোগে শুক্রবার রাজ জালান ও আকাশ দত্ত নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কার্নিভালে পার্কিং ফি আদায় নিয়ে ‘প্রতিবাদ’ জানাতে দলবল-সহ রাস্তায় নেমেছিলেন রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তথা শিবপুর কেন্দ্রের বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি। প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে হাওড়া পুরসভার বিবাদ বেধেছিল গত বুধবার থেকেই। মারধর করা হয়েছিল পুরসভার কর্মীদের।
এর পরে নিরাপত্তার কারণে ওই দিনই বড়দিনের কার্নিভাল বন্ধ করে দিয়েছিলেন হাওড়ার পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। বিষয়টি কানে যাওয়ায় পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কার্নিভাল চালু করার নির্দেশ দেন এবং ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে পাঠান বিষয়টি দেখতে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মেলা প্রাঙ্গণ। এমনকি, পুর চেয়ারপার্সনকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে শিবপুর বিধায়কের বিরুদ্ধে। হেনস্থার সেই ছবি টিভিতেও দেখানো হয়। পরে অরূপের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত করে ফের কার্নিভাল চালুর কথা ঘোষণা করেন পুর চেয়ারপার্সন।
কার্নিভালে হওয়া ঘটনা প্রসঙ্গে শুক্রবার হাওড়ার বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ পড়ুয়া অনুষ্কা দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে আশা করা যায় না। কারও সঙ্গে কোনও ব্যাপারে মতের মিল না হতেই পারে, কিন্তু তাতে প্রকাশ্যে এ ভাবে কাউকে হেনস্থা করতে হবে? এটা যথেষ্ট লজ্জার বিষয়।’’ পুর চেয়ারপার্সনকে প্রকাশ্যে হেনস্থা করার ঘটনা টিভিতে দেখেছেন চিকিৎসক নিশীথরঞ্জন চৌধুরী। হাওড়ার বাসিন্দা ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘হাওড়ার পুর প্রশাসক পেশায় এক জন শিশুরোগ চিকিৎসকও বটে। তাঁকে যে ভাবে এক মন্ত্রীর হাতে হেনস্থা হতে দেখা গিয়েছে, তা হাওড়াবাসীর পক্ষে লজ্জাজনক। এর পরে আর কোনও চিকিৎসক মানুষের জন্য কাজ করতে প্রশাসনে আসতে ভয় পাবেন। এই প্রশাসনের উচিত এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা।’’
দলীয় কোন্দলের জেরে জেলার একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যে ভাবে বন্ধ হতে বসেছিল, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ মধ্য হাওড়ার একটি দোকানের মালিক ভাস্কর পাল। তিনি বলেন, ‘‘যে মন্ত্রীকে এই ভাবে হেনস্থা করতে দেখা গিয়েছে, তাঁর উচিত হাওড়ায় এমন একটি অনুষ্ঠানে সাহায্য করার জন্য পুর প্রশাসক সুজয়বাবুকে ধন্যবাদ দেওয়া। তা না করে উনি অপমান করেছেন।’’ এই ঘটনায় লজ্জিত হাওড়া আদালতের ক্রিমিনাল বার লাইব্রেরির সভাপতি সমীর বসুরায়চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বন্ধ করার চেষ্টা একেবারেই অনুচিত। দলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে উঠে এই অনুষ্ঠান করা হোক।’’
হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা ঘোষ রায়ের মতে, ‘‘যে ঘটনা বড়দিনের কার্নিভালে ঘটেছে, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, কোথাও রাজনৈতিক দলের সদস্যরা প্রশাসনিক নিয়মশৃঙ্খলায় হস্তক্ষেপ করছেন বা সেটার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। অর্থাৎ, আইনবিরুদ্ধ কাজ করছেন। পুর প্রশাসকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে সেটা প্রশাসনের উপরমহলে বলতেই পারতেন প্রতিমন্ত্রী।’’