রূপনারায়ণ নদের ধান্যগোড়ির জেলেপাড়া বাঁধের জোড়াতালি দিয়ে কাজের অভিযোগ এলাকাবাসীর। —নিজস্ব চিত্র।
মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর, দ্বারকেশ্বর ও রূপনারায়ণে ঘেরা আরামবাগ মহকুমায় বর্ষায় চিন্তা বাড়ে বাসিন্দাদের। বৃষ্টির পাশাপাশি ডিভিসি থেকে ছাড়া ও বাঁকুড়া অববাহিকা থেকে আসা জলে প্রতি বছরই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। অন্য বছর মার্চ মাস থেকেই ভাঙা ও দুর্বল বাঁধগুলি চিহ্নিত করে তা সংস্কার শুরু হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরে পঞ্চায়েত নির্বাচনী বিধি থাকায় কিছু চালু কাজ ছাড়া নতুন স্থায়ী সংস্কারের কাজগুলি এখনও হয়নি। ফলে এই মহকুমার বাসিন্দাদের উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
খানাকুল-২ ব্লকের মুণ্ডেশ্বরী সংলগ্ন চিংড়াবাসীদের অভিযোগ, ‘‘এই নদীর পলি তোলার কাজ কিছুটা হয়েছে। পাড় সংস্কার হয়নি। এতে তো বিপদ বাড়ল।’’ পলি তোলায় নদী গর্ভ নীচু হয়ে যায়। ফলে ডিভিসির জল দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে সমান ভাবে না বয়ে প্রায় পুরোটাই মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে বইবে। এর ফলে ভাঙা পাড় অনায়াসে উপচে গ্রামগুলি প্লাবিত হবে বলেই আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
একই রকম আতঙ্কে দ্বারকেশ্বর ও রূপনারায়ণ নদ সংলগ্ন এলাকার মানুষ। খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি এলাকায়, গত বন্যায় সেনাবহিনীর সাহায্যে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়েছিল বাসিন্দাদের। বন্যা পরিস্থিতি কাটার পর তাঁদের দাবি ছিল, জেলেপাড়ার বাঁধটি কংক্রিটের করে দেওয়া হোক। এখনও তা হয়নি। সেই ভাঙনের মধ্যে বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য সুজাতা পাত্রের বাড়িও ছিল। তাঁর অভিযোগ, “সেচ দফতর থেকে জোড়াতালি দেওয়া কাজ হয়েছে, ফলে কম জলেই ধস নামছে। আমরা এখনও বিপদের মুখেই রয়ে গেলাম।”
একই হতাশা খানাকুল-১, আরামবাগ ও গোঘাট-১ ব্লকের নদ সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের গলাতেও। গোঘাট-১ ব্লকের মণ্ডলগাঁথির রিভার পাম্পটি দ্বারকেশ্বর নদে ঝুলছে। এক স্থানীয়ের ক্ষোভ, “সেচ দফতরের নিষ্ক্রিয়তায় এ বার পুরো গ্রামটাই নদ গর্ভে চলে যাবে।”
সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের বন্যায় দ্বারকেশ্বর ও রূপনারায়ণ নদের বাঁধের মেরামত শেষ হয়নি। আবার আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ, অরোরা খালের শেষ অংশ সংস্কার-সহ জল নিকাশির উন্নতির কাজও শুরু হয়নি। বন্যা মোকাবিলায় মহকুমার পরিকল্পিত সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে মুণ্ডেশ্বরী নদীর পলি উত্তোলন ও পাড় সংস্কার অন্যতম।
সেচ দফতরের এক জেলা আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির ৮০ শতাংশই হয়ে গিয়েছে।’’