বাসের সংখ্যা কম। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা যাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলে শহিদ দিবস তথা ২১ জুলাই উপলক্ষে সোমবার থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে দূরপাল্লার বাস তুলে নেওয়া শুরু হয়েছে। তার জেরে ভোগান্তিতে পড়ছিলেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার থেকে সেই ভোগান্তি বেড়েছে আরও। এ দিন আরামবাগ হয়ে চলাচলের অধিকাংশ বাসই উধাও। সব থেকে করুণ অবস্থা আরামবাগ থেকে বর্ধমান রুটের। ওই রুটে চলাচল করা ৮০টি বাসের মাত্র ৪টি চলেছে। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান থেকে কলকাতা বা তারকেশ্বরগামী বাসগুলির ১৬০টির মধ্যে চলেছে ৯৪টি।
দূরপাল্লার বাস মালিক সংগঠনের (হুগলি ইন্টার রিজিয়ন) সম্পাদক গৌতম ধোলে বলেন, “সোমবার রাস্তায় যেগুলি আটক করা হয়েছিল, সেগুলি উপরমহলে জানানোর পরে ছেড়েছে। আর যে বাসগুলি আগাম বুক করা রয়েছে, সেগুলি যদি পথে আটকে দেওয়া হয়, সেই আশঙ্কায় বেরোয়নি।’’ আরামবাগ বাস মালিক সংগঠনের এক কর্মকর্তা শান্তনু ধোলের অভিযোগ, “আমাদের রুটের চারটি বাস, যেগুলি কলকাতা যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই, সেগুলিই চালাতে হয়েছে। বাকি সব বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের ক্ষোভ থাকলেও আমরা অসহায়।”
মহকুমার বিভিন্ন শাখা রুটের বাসও বাদ যায়নি। সেগুলিও তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক বাস মালিক সংগঠনের মালিকের আশঙ্কা, এই হিড়িকে বুধবার থেকে হয় তো পথে বাসই মিলবে না। তিনি জানান, একটা বাসকে দু’তিন জায়গায় তৃণমূল নেতারা চিঠি দিয়েছেন। এ বার যাদের শক্তি বেশি, রাস্তা থেকে তারাই বাস আটকে দেবে।
আরামবাগ থেকে বর্ধমান যাওয়ার জন্য ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে বাস পেয়েছেন সুদর্শন বেড়া। তাঁর অভিযোগ, “এটাও শেষ পর্যন্ত বর্ধমান যাবে কি না নিশ্চিত করে বলছেন না বাসকর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, রাস্তায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বাস আটকে পতাকা বেঁধে দিলেই আর বাস যাবে না।” তবু জরুরি প্রয়োজনে পথে তো বেরোতেই হচ্ছে। বাস আটকালে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে অন্য গাড়ি ভাড়া করার প্রস্তুতি রাখতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিন-চার দিন আগে থেকেই বাস দখলে নেওয়া হচ্ছে কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহকুমার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, “২০১১ সাল থেকেই এই হাল। বুথ পিছু কত লোক নিয়ে যেতে হবে সেই লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেন রাজ্য এবং জেলা নেতারা। এ বার যেমন বুথ পিছু কমপক্ষে চারটি বাসে লোক নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আরামবাগ মহকুমার ক্ষেত্রে আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কোন গোষ্ঠী কত জমায়েত করতে পারে তা নিয়েও প্রতিযোগিতা চলে।”
পরিবহণের এই হাল নিয়ে প্রশাসন এবং পরিবহণ দফতরের অবশ্য দাবি, এ বিষয়ে তাঁরা কোনও অভিযোগ পাননি।