প্লাস্টিক হাতে নিয়ে দেখাচ্ছেন এক দোকানি। নিজস্ব চিত্র
ঢাকঢোল পিটিয়ে গত পয়লা জুলাই থেকে হুগলির সব পুর-এলাকায় ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার অল্প কিছু দিন পরে পঞ্চায়েত এলাকাতেও একই ঘোষণা করা হয়। ব্যাপক প্রচার চলে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারে জরিমানাও শুরু হয় বিভিন্ন পুর-এলাকায়। কোথাও কোথাও মামলাও করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কিছু দিন ধরে কঠোরতার সেই রাশ অনেকটাই আলগা। সেই সুযোগে ফের জাঁকিয়ে বসেছে পাতলা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ।
সোমবার সকালে উত্তরপাড়ার কাঁঠালবাগান বাজারে এক মাছবিক্রেতা এক খদ্দেরকে কাপড়ের ক্যারিব্যাগে মাছ দিচ্ছিলেন। ওই খদ্দের নিজে ব্যাগ আনেননি। দোকানির দেওয়া ব্যাগেও অখুশি। জানালেন, অন্য ক্যারিব্যাগে মাছের রক্ত গায়ে পড়ে। মাছবিক্রেতা পাতলা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বের করে খদ্দেরের চাহিদা মেটালেন। কমবেশি একই পরিস্থিতি শখেরবাজার, উত্তরপাড়া বাজার, হিন্দমোটর ২ নম্বর বাজার, স্টেশন বাজারেও। জেলা সদর চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, চন্দননগর থেকে শ্রীরামপুর, কোন্নগর— সর্বত্রই চেনা ছবি ফিরেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা খরচ করে প্রচার করে পাতলা প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযানের রাশ হঠাৎ আলগা করে দেওয়া হল কেন?
উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গির উপদ্রব বাড়ায় পুরকর্মীরা সেই কাজে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে, ফের জোরদার অভিযান করা হবে। সোমবার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে আমাদের বৈঠক ছিল। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পুজোকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।’’
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী জানান, অভিযান একটু ঢিলেঢালা হতেই কিছু জায়গায় প্লাস্টিকের পাতলা ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে বলে তাঁরা খবর পাচ্ছেন। এ নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। শীঘ্রই ফের অভিযানে নামা হবে। হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, ‘‘বাজারে দেখছি, ৭৫ মাইক্রন বলে ব্যবসায়ীরা যা দিচ্ছেন, সেটা আসলে পাতলা প্লাস্টিক। আমার মনে হয়, উৎসেই এগুলি বন্ধ করা জরুরি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সর্বত্র পাতলা প্লাস্টিক বন্ধ না হওয়ায়, অন্য জায়গা থেকে আমাদের শহরে তা ঢুকছে। তবে, আমরা ফের অভিযান শুরু করব। নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধে আমরা বদ্ধপরিকর।’’
সাধারণ মানুষের একাংশের বক্তব্য, একতরফা ভাবে শুধু পাতলা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করলেই হবে না, বিকল্পের সরবরাহ ধারাবাহিক ভাবে থাকাও জরুরি। বিকল্প না পেয়েই অনেকে চেনা পথে ফিরেছেন। অনেকে বলছেন, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে বাজারে যা চলছে, তা পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরীক্ষিত কি না, সেই প্রশ্নও রয়েছে।