বুধবার সকাল থেকেই রিষড়ার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বেরোতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। নিজস্ব চিত্র।
ধীর গতিতে হলেও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টায় রিষড়া। অন্তত বুধবার সকালে চোখে পড়ল এমন দৃশ্য। গত রবিবার থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে রিষড়ার কয়েকটি জায়গায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার কারণে জনজীবনে প্রভাব পড়েছিল। বন্ধ হয়েছিল দোকানপাট। জারি হয়েছিল ১৪৪ ধারা। কিন্তু সেই পরিস্থিতি খানিকটা হলেও স্বাভাবিক হতে দেখা গেল বুধবার সকালে। রিষড়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তৎপর প্রশাসনও। এলাকা জুড়ে টহল দিচ্ছে পুলিশের গাড়ি। পায়ে হেঁটেও পুরো এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।
বুধবার সকাল থেকেই রিষড়ার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বেরোতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। যদিও চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যায়নি। রিষড়ার যে চার নম্বর গেট এলাকায় সোমবার রাতে অশান্তি ছড়িয়েছিল, সেখানেও খোলা হয়েছে কয়েকটি সব্জি এবং মুদির দোকান। সেই দোকানগুলিতেই কেনাকাটা সেরে যে যার মতো বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সকাল থেকে একটা-দু’টো টোটো এবং রিক্সাও চলতে দেখা গিয়েছে রিষড়ার রাস্তায়। তবে প্রশাসনের তরফে ১৪৪ ধারা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার পরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল। তা-ও এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যদিও বুধবার সকালে লোকজন রাস্তায় বেরোলেও কোথাও খুব একটা জমায়েত হতে দেখা যায়নি।
সব্জি বিক্রেতাদের দাবি, পুলিশকে সামনে দেখে তাঁদের মনোবল বাড়ছে। সব্জি বিক্রেতা শম্ভু দেবনাথের কথায়, ‘‘বুধবার থেকে বাজার খুলল। সোমবার আর মঙ্গলবার বন্ধ ছিল। আমাদের সব সব্জি পচে যাচ্ছিল। কিছু দোকান খোলা রয়েছে, কিছু দোকান এখনও বন্ধ।’’
তবে বুধবার সকালেও মানুষের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন তাঁরা। শম্ভু বলেন, ‘‘আমরা এখনও আতঙ্কে রয়েছি। আমরা চাই শান্তি ফিরুক। সকলে যেন শান্তিতে একসঙ্গে বাস করতে পারে সেটাই চাইছি।’’
প্রসঙ্গত, রবিবার হুগলির রিষড়ার সন্ধ্যাবাজার এলাকায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মিছিলে অশান্তি ছড়ায়। সেখানে ইটবৃষ্টি এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। ওই কাণ্ডে অনেককে আটক করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে, রিষড়া এবং মাহেশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সোমবার রাতেও হুগলির রিষড়া স্টেশনের কাছে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রিষড়া স্টেশনের কাছে চার নম্বর রেল গেট এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ট্রেন চলাচল। অশান্তির কারণে, যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করা হয় ট্রেন চলাচল। ফলে বহু যাত্রী দুর্ভোগের মুখে পড়েন। এর পর থেকে পরিস্থিতি আরও থমথমে হয়ে যায়। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ে। সেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রিষড়ায় যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি সেখানে গিয়ে শান্তি ফেরানোর বার্তা দেন। এর পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে এবং সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে আরও সক্রিয় হয় পুলিশ প্রশাসন। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে অশান্ত এলাকাগুলিতে।