dengue death

ডেঙ্গিতে যুবকের মৃত্যু, মশা দমনে বালি পুরসভার ভূমিকায় ক্ষোভ

বালির বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন বালিতে পুর বোর্ড নেই। প্রশাসকমণ্ডলীও নেই। তা হলে দেখাশোনা করবে কে? তৌসিফ সদর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৮
Share:

তৌসিফ সদর। ছবি সংগৃহীত

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এ বার বালি পুরসভা এলাকায়। মৃতের নাম তৌসিফ সদর (২৯)। তিনি বালি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেলুড় ভোটবাগান এলাকায় থাকতেন। মঙ্গলবার সকালে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবকের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর শংসাপত্রে কারণ হিসাবে ডেঙ্গি শক এবং তার জেরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকল হওয়ার কথা লেখা রয়েছে।

Advertisement

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে কয়েক দিন আগেই জানা গিয়েছিল, ডেঙ্গির প্রকোপে প্রথম স্থানে রয়েছে কলকাতা। উদ্বেগের তালিকায় রয়েছে হাওড়া ও বালি পুর এলাকাও। স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণেও কলকাতার পরে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং জলপাইগুড়ি। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বালি পুর এলাকায় এই মরসুমে এটিই প্রথম মৃত্যু। এ দিন বালি পুরসভার প্রশাসক তথা হাওড়া সদরের মহকুমাশাসক তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরসভার তরফে ডেঙ্গির মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” যদিও তৌসিফের পরিজন থেকে প্রতিবেশীদের অধিকাংশের অভিযোগ, এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় কার্যত কিছুই কাজ হচ্ছে না। বালির বাসিন্দাদের এটাও অভিযোগ, দীর্ঘদিন বালিতে পুর বোর্ড নেই। প্রশাসকমণ্ডলীও নেই। তা হলে দেখাশোনা করবে কে?

গত ১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বালির ৩৫টি ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত ছিলেন ৭৮ জন। প্রতি সাত দিন অন্তর পরিসংখ্যান রিপোর্ট তৈরি হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, তৌসিফের ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ। অধিক আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে ২৪ নম্বর (ন’জন), ১৪ নম্বর (আট জন), ২৬ নম্বর (সাত জন), ১৫ নম্বর (ছ’জন) ও ৯ নম্বর (পাঁচ জন) ওয়ার্ড।

Advertisement

তৌসিফের আত্মীয় তথা স্থানীয় চিকিৎসক ওয়াসিম আখতার বলেন, “পুরো এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরীক্ষা করালে ডেঙ্গি ধরাও পড়ছে।” পুর এলাকায় এই প্রথম ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবরে উদ্বিগ্ন বালির বাসিন্দারা। তৌসিফের কাকা, পেশায় ফার্মাসিস্ট আসরাফ আহমেদ জানান, জ্বর হওয়ায় পরীক্ষা করালে ডেঙ্গি পজ়িটিভ আসে ওই যুবকের। গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে জ্বরের তীব্রতা বাড়ে, সঙ্গে বমি শুরু হয়। তখন তৌসিফকে টি এল জায়সওয়াল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্যালাইন চালানো হলে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয় বলে জানায় পরিবার। যদিও সেখানকার চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তী সময়ে অভিযোগ তুলেছেন তৌসিফের পরিজনেরা। আসরাফ বলেন, “২ সেপ্টেম্বর সকালে রক্ত পরীক্ষার নামে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভাইপোকে জলও খেতে দেওয়া হয়নি। যেখানে ডেঙ্গি রোগীর জল কিংবা তরল খাবার অত্যন্ত জরুরি।” তিনি জানান, জ্বরের তীব্রতা বেড়ে শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় জায়সওয়াল থেকে যুবককে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে তৌসিফকে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। তবুও শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে আন্দুল রোডের অন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিন সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। আসরাফের দাবি, “জায়সওয়াল হাসপাতালের গাফিলতিতেই তৌসিফের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।”

টি এল জায়সওয়াল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৈলাস মিশ্র বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওই যুবকের পরিজনেদের তরফে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” এ দিন জয়বিবি লেনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকায় শোকের ছায়া। পরিজনেরা জানান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে, ফার্মাসি কোর্সও করেছিলেন তৌসিফ। নিজেদের ওষুধের দোকানে বাবাকে তিনি সাহায্যও করতেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement