শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা পালপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
বছর চারেক আগে পুজোর মরসুমে হাজারের উপর লক্ষ্মী মূর্তির বরাত পেয়েছিলেন সোনালি পাল। গত বছরেও বরাত ছিল ৪০০ মূর্তির। অথচ এ বার ১০০টি মূর্তিও বিক্রি হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
মূর্তির কারিগর গৌতম পালের চিন্তাও একই। উপকরণ, রঙের দাম আকাশছোঁয়া। কাজ শেষে সেই টাকাটাও উঠবে কি না, ভেবে কুল পাচ্ছেন না তিনি।
শুধু সোনালি বা গৌতম নন। চুঁচু়ড়ার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসডাঙার পালপাড়ার কয়েকশো শিল্পীর কপালেই লক্ষ্মীপুজোর আগে ভাঁজ পড়েছে।
এই পটুয়াপাড়ার খ্যাতি বড় ঠাকুরের পাশাপাশি প্রতিমার শোলার সাজ তৈরিতেও। শিল্পীরা লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকের মতো ছাঁচের ঠাকুর তৈরি করেন। সেগুলির মাপ হয় কয়েক ইঞ্চি থেকে শুরু করে কয়েক ফুট পর্যন্ত। বেশির ভাগ প্রতিমাই পাইকারি দামে জেলা তো বটেই, এমনকি জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরাও কিনে নিয়ে যান। লক্ষ্মী পুজোর আগে এই পরিবারগুলির ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। তবে গত তিন চার বছর ধরে ধীরে ধীরে ছবিটা বদলে যাচ্ছে।
শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এখান থেকে এখন ছোট প্রতিমার বিক্রি কমছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে তিনটি বিষয়। প্রথমত, পাল সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আরও অনেকে এই শিল্পে যোগ দিয়েছেন। ফলে প্রতিযোগী বেড়েছে। টান পড়েছে বিক্রিতে।
দ্বিতীয়ত, বিগত চার বছরে মাটির দাম ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রতিমা তৈরির জন্য এক ট্রলি এঁটেল মাটির দাম ছিল ৮০০ টাকা। বর্তমানে তার দাম ১২৯০ টাকা। রং-এর দামও আকাশ ছুঁয়েছে। সবুজ, কমলা ৬ হাজার টাকা কেজি। সোনালি ২ হাজার। ফলে খরচ বাড়ছে
অনেক বেশি।
তৃতীয়ত, অনেকেই বারবার প্রতিমা না কিনে পিতল বা পাথরের প্রতিমা কিনে নিচ্ছেন। সেটাও মূর্তি বিক্রি কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন শিল্পীরা।
সোনালি বলেন, ‘‘বিয়ে হয়ে এসে এই পালবাড়িতেই ঠাকুর তৈরিতে হাতেখড়ি আমার। বছর ছ'য়েক ধরে ছাঁচের প্রতিমা তৈরি করছি। এত তাড়াতাড়ি ব্যবসার এমন হাল হবে, ভাবিনি।’’ শিল্পী কার্তিক পালের কথায়, ‘‘ঠাকুর তৈরির সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছি। বিক্রি না হলে তো ক্ষতি আমারই।’’
পাল পাড়ায় ঢুঁ মেরে দেখা গেল, নিজের তৈরি ছাঁচের লক্ষ্মীর পাশে পিতলের লক্ষ্মী পালিশ করতে ব্যস্ত শিল্পী গোপাল পাল। এ বার কি পিতলের প্রতিমাও বিক্রি করছেন? গোপালের জবাব, ‘‘না না। ওই কারবারে অনেক টাকার প্রয়োজন! চাহিদা বুঝে পিতল-পালিশ কিনে এনেছি। ঘষে-মেঝে ২০-৩০ টাকা মেলে। যে’টুকু ‘লক্ষ্মী’ ঘরে আসে
আর কি!’’