ঘোষপুর বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে আনাজ চাষ করা হয়েছে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
মিড-ডে মিলে বাড়তি পুষ্টির লক্ষ্যে চার মাস ধরে ছাত্রছাত্রীপিছু সপ্তাহে ২০ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। এপ্রিল মাসে তা শেষ হয়েছে। সপ্তাহে একদিন মাংস বা তিন দিন ডিম ও ফল দেওয়া বন্ধ হচ্ছে। ফের আগের মতোই পড়ুয়াদের পাতে ডিমের অর্ধেকটা পড়বে কি না সন্দেহ! এই অবস্থায় কর্মসূচিটিতে সাবলম্বী হতে নিজেরাই আনাজ চাষ শুরু করেছেন খানাকুলের ঘোষপুর ইউনিয়ন হাই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। ইতিমধ্যে ছাত্রছাত্রীদের পাতে পড়তে শুরু করেছে স্কুলের লাউ, ঢেঁড়শ। বাজার থেকে আনাজ কিনতে না হলে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ টাকাবাঁচানো সম্ভব হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।
স্কুলের একটি বড় পুকুরের পাড়ের ৮ কাঠা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আনাজ বাগান। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষবাদ হচ্ছে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক অরুণকুমার মণ্ডল বলেন, “বাজারদর অনুপাতে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ নেহাতই কম। পুষ্টি বজায় রেখে সারা বছর কর্মসূচিটি চালাতে হিমশিম খেতে হয়। নিজেদের চাষের আনাজ নিশ্চিত হলেও অনেকটা স্বয়ংসম্পর্ণ হতে পারব আমরা।”
মিড-ডে মিলে মাথাপিছু স্বল্প বরাদ্দের উপর নির্ভরতা কমাতেই এই পরিকল্পনা বলে জানান স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দার আলি। তিনি বলেন, “স্কুলের পুকুর পাড়ের আরও পতিত জমিতে আনাজ চাষের এলাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।”
মাসখানেক ধরে বাগানের পুঁইশাক, লাউ, ঢেঁড়শ ইত্যাদি আনাজ মিড-ডে মিলে ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্কুলে প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষক অচিন্ত্য মাজি। তাঁর দাবি, “বাগানে ফসল ফলতে শুরু করায় ইতিমধ্যেই সপ্তাহে দু’-তিন দিন বাজার থেকে আনাজ কেনা বন্ধ করতে পেরেছি। বাকি দিনগুলিতে স্কুলের টাটকা আনাজের সঙ্গে বাজারের আনাজ মেশানো হচ্ছে। খরচ কিছুটা কমানো গিয়েছে। গরমের ছুটিতে বাগান আরও ভরে উঠবে।”
ঘোষপুর হাই স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলের মোট উপভোক্তা ৫৩০ জন। অধিকাংশ দিন এই পড়ুয়াদের ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি পড়ুয়া মিড ডে মিল খায়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে ষষ্ট থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে পড়ুয়াপিছু বরাদ্দ ৮ টাকা ১৭ পয়সা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াপিছু বরাদ্দ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। ওই টাকার মধ্যেই কিনতে হয় আনাজ, ডাল, সয়াবিন, পোস্ত, ডিম এবং তেল-সহ মুদিখানার সামগ্রী ও গ্যাস সিলিন্ডার। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, মিড-ডে মিলের মোট উপভোক্তার ৮৫ শতাংশের জন্য টাকা দেওয়া হয়।