এই ষাঁড়টিকে নিয়েই ত্রস্ত এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র।
দশাসই চেহারা। মিশকালো রং। তার ভয়ে থরহরিকম্প গোটা পাড়া!
রাস্তায় বেরিয়ে বার বার পিছন ফিরতে হচ্ছে, সে ধেয়ে আসছে না তো! মেজাজ বিগড়ে গেলেই তেড়ে যাচ্ছে। তাকে দেখে ঘরে খিল আঁটছেন মহিলারা। লাঠি উঁচিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করলে চোটপাট আরও বাড়ছে।
ষাঁড়ের এ হেন দাপটে বেশ কিছু দিন ধরে অতিষ্ঠ বলাগড়ের চরকষ্ণবাটী পঞ্চায়েতের বেনালি চর এবং পদ্মডাঙা গ্রামের মানুষ। বৃহস্পতিবার তাঁরা পঞ্চায়েতে গণস্বাক্ষর করা দরখাস্ত জমা দিয়েছেন, যাতে ষাঁড়টিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ষাঁড়টির মাথায় ক্ষত রয়েছে। তা নিয়েও উদ্বেগে গ্রামবাসী। তার চিকিৎসার ব্যবস্থার আর্জিও তাঁরা জানিয়েছেন। একই মর্মে ই-মেল করা হয়েছে হুগলির জেলাশাসক, গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার, বলাগড়ের বিডিও, ব্লক পশুপালন আধিকারিককে। বিষয়টি জানানো হয়েছে স্থানীয় থানাকেও।
গ্রামবাসীরা জানান, এলাকায় তিনটি ষাঁড় ঘুরে বেড়ায়। কালোটি ছাড়াও দু’টি লাল রঙের। তারা ফসলের ক্ষতি করছে। তার থেকেও বেশি চিন্তা কালো ষাঁড়টির মেজাজ নিয়ে। বেনালি চরের বাসিন্দা গোপেন বেনালি বলেন, ‘‘ষাঁড়টা বাড়ির সামনে চলে আসছে। লোক দেখলেই তাড়া করছে। ওকে দেখলেই ভয়ে দরজা বন্ধ করতে হচ্ছে।’’ বাপ্পা মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘‘মানুষ খুব আতঙ্কে আছেন। শুধু এখান থেকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়াই নয়, ষাঁড়টির ক্ষতের চিকিৎসা করাও জরুরি।’’
দিন পনেরো আগে ষাঁড়টির আক্রমণে আহত হন পদ্মডাঙার যুবক রতন শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘হেঁটে যাচ্ছিলাম। পিছন থেকে ষাঁড়টা এসে আমাকে ফেলে দেয়। তার পরেও গুঁতো মারতে থাকে। হাতে-পায়ে চোট পাই। আশপাশের লোকেরা ষাঁড়টিকে তাড়িয়ে আমাকে বাঁচান। অনেকেই ওর তাড়া খেয়েছেন। খুব ভয়ে আছি। রাতবিরেতেও রাস্তায়, বাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকছে।’’
পঞ্চায়েত প্রধান অসীম বৈদ্য জানান, ষাঁড়ের শিংয়ের গুঁতোয় এক জনের হাত কেটেছে। তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে পাঁচ জন পড়ে আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্লকের প্রাণিসম্পদ বিভাগের আধিকারিক বরুণ মৌলি বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এলাকার প্রাণিবন্ধুদের খোঁজ নিতে বলেছি। ষাঁড়টি ধরা গেলে আমি নিজে গিয়ে চিকিৎসা করব।’’
গ্রামের মানুষ জানালেন, ষাঁড়টি গুপ্তিপাড়া ফাঁড়িতেও ঢুকেছে। বুধবার সে ফাঁড়িতে স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে মাথা দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। গঙ্গার সামনেও তাকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। তাতে অনেকের ধারণা, ক্ষতস্থানে হাওয়া লাগিয়ে আরাম পেতে চাইছে সে। গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘ষাঁড়টি একে জখম। তার উপরে ভয়ে লোকজন ওকে দেখলেই তাড়ানোর চেষ্টা করছে। তাতে সম্ভবত আরও রেগে বা ঘাবড়ে গিয়ে পাল্টা তেড়ে যাচ্ছে।’’
কয়েক বছর আগে শ্রীরামপুরে একটি ষাঁড়ের আক্রমণে অনেকে আহত হন। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। পুলিশ-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ে দমকল ষাঁড়টিকে ধরে পশু পুনর্বাসনের সংস্থায় পাঠিয়েছিল।
এ ক্ষেত্রেও ষাঁড়টির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হোক, চান গ্রামবাসীরা।