বুকিং চলছে। কামারপুকুর চটিতে।
গত দু’বছর করোনার কারণে কোনও বায়না ছিল না গোঘাটের কামারপুকুরের যাত্রা দলগুলির। কলাকুশলীরা কেউ আনাজ বিক্রি, কেউ দিনমজুরি করে সংসার চালিয়েছেন। শুক্রবার, রথযাত্রায় বায়না নেওয়ার শুরুর দিন থেকে আরামবাগের ১৭টি যাত্রা দল ৩০-৪০টি করে বায়না পেল। ‘দিন ফিরবে’-এই আশায় বুক বাঁধছেন শহরের অপেরা মালিক ও কলাকুশলীরা।
বরাবরের প্রথা মেনে রথের দিন যাত্রাপালার বায়না নেওয়া হয়। সকাল ৮টা থেকেই কামারপুকুর চটিতে বিভিন্ন অপেরার অস্থায়ী অফিসগুলোতে যাত্রাপালা বায়না করতে আসেন ‘নায়েক’রা। কামারপুকুরে যাত্রাশিল্প শতাব্দী প্রাচীন। অতীতে খান পঞ্চাশেক অপেরা থাকলেও অনেক অপেরা যেমন বন্ধ হয়েছে, আবার অনেক নতুন গজিয়ে উঠেছে।
টানা ৩৮ বছর ধরে যাত্রা জগতের সঙ্গে যুক্ত ‘নিউ রায় অপেরা’র মালিক তথা নায়ক শান্তি রায় বলেন, “এখন পালার সংখ্যা কমেছে। গত দু’বছর করোনার জেরে পালা বন্ধ থাকায় আমাদের অনেককেই দিনমজুরি, সবজি বিক্রি, এবং মেয়েদের পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে। এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই ফিরবে বলেই আশা।” শিল্পী তীর্থ অপেরার মালিক তথা নায়িকা বৈশাখী দাস বলেন, “আমাদের ৩০টি পালার বায়না হল। এগুলো সবই কালীপুজোর মধ্যে। এই ধারা বজায় থাকলে সারা বছরে ১৯০টা থেকে ২০০টা পর্যন্ত পালা করা যাবে।”
বর্তমানে ১৭টি দল পিছু বিভিন্ন বয়সের ২০ থেকে ২৫ জন কলাকুশলী রয়েছেন। কামারপুকুরের অপেরাগুলির পালা পিছু দর ১৫ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যাত্রা পালা করে শিল্পীরা ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। সাধারণ ভাবে বছরে গড়ে ১৭০ দিন থেকে ২০০ দিন পর্যন্ত বায়না হয়ে থাকে। গণেশ অপেরার মালিক এবং নায়ক সব্যসাচী মৌলিকের অভিযোগ, “কামারপুকুরের যাত্রা শিল্পকে বাঁচাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা সরকারি স্তরে উদ্যোগ নেই। রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পে আমাদের নাম অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।’’
যাত্রা শিল্পে সঙ্কটের কথা স্বীকার করে কামারপুকুরের পঞ্চায়েত প্রধান তপন মণ্ডল বলেন, “কামারপুকুরে যাত্রা শিল্পের ঐতিহ্য বজায় রাখতে পঞ্চায়েত স্তরে পরিকাঠোমো গড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা হয়েছে। সরকারি লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় শিল্পীদের যে ব্যক্তিগত অনুদানের ব্যবস্থা আছে তাতে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”