Uttarpara

বাড়ির কর্তার মৃত্যুশোকে প্রায় ২০ দিন ঘরবন্দি হন পরিবারের বাকিরা, এক জনের মৃত্যু হাসপাতালে

গত সোমবার উত্তরপাড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউর থার্ড লেনের ‘গগন ভিলা’র মূল দরজা ভেঙে ওই পরিবারের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা’ শেষ! বাবার মৃত্যুশোকে ঘরবন্দি হওয়া পুত্রের মৃত্যু হল হুগলির উত্তরপাড়া হাসপাতালে। ৫৫ বছরের সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যের দায়িত্ব নিল উত্তরপাড়া পুরসভা।

Advertisement

গত সোমবার উত্তরপাড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউর থার্ড লেনের ‘গগন ভিলা’র মূল দরজা ভেঙে ওই পরিবারের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুরসভা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অশীতিপর শ্যামলী মুখোপাধ্যায়, তাঁর ছেলে সৌরভ (৫৫) এবং মেয়ে চুমকি মুখোপাধ্যায়কে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওই বাড়ির কর্তা গগনবরণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যা নিজেদের ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ করে ফেলেন বাড়িতে। এক আত্মীয়কে ফোনে সৌরভ বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি।’ বস্তুত, প্রায় না খাওয়াদাওয়া করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলেন তিন জনই। এ ভাবেই দিন কুড়ি কেটে গিয়েছে। তার পর খবর পেয়ে তিন জনকে উদ্ধার করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সৌরভকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই প্রৌঢ়ের মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বোনের অবস্থা সঙ্কটজনক।

সৌরভের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর এক আত্মীয় বৈষ্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গৃহকর্তা গগন মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর থেকে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিন জন। বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেন সকলেই। কারও সঙ্গেই যোগাযোগও ছিল না। মাসখানেক না খেয়েদেয়ে এ ভাবেই হয়তো পড়ে ছিলেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এক দিন আমাকে ফোন করে সৌরভ বলে, ‘দাদা, আমার শরীর খুব খারাপ। এক মাস আমরা কিছু খাইনি। এক বার আসবে?’ আমি আসতে চাইলে বলে আজ পূর্ণিমা। কাল এসো। তা সত্ত্বেও আমি আসি। কিন্তু দরজা খোলে না। এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর সৌরভ দরজা খুলে বলে, ‘আর দু দিন বাঁচব।’ আমি বলেছিলাম, ‘তুই মারা গেলে মা-বোনকে কে দেখবে?’’’

Advertisement

গত সোমাবর ওই বাড়িতে আবার যান বৈষ্ণব। বাড়ির দরজা বন্ধ থাকায় এবং ভিতর থেকে কারও সাড়া না পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুরপ্রধানকে খবর দেন তিনি। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব খবর দেন উত্তরপাড়া থানায়। বুধবার ওই পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুসংবাদে দিলীপ বলেন, ‘‘মৃতের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়েছে। শেষকৃত্যের যাবতীয় ব্যবস্থা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রশাসনের কারও কাছে কোনও সাহায্য চাননি কেউ। এটা আমাদের কাছে খুব কষ্টের। সমাজের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যে-ই শুনবেন, তাঁর কাছে এটা খুবই কষ্টের খবর। আমরা যখনই জানতে পেরেছি, তৎক্ষণাৎ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। গগনবাবুর স্ত্রী এবং মেয়ের চিকিৎসা চলছে। আশা করব, তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement