মাথা তুলেছে অসংখ্য বহুতল। বাগনান শহরে। নিজস্ব চিত্র
বাগনান ১ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতে রয়েছে কঠিন বর্জ্য পরিচালন ব্যবস্থাপনা। হাওড়া জেলায় হাতে গোনা যে কয়েকটি জায়গায় এই ব্যবস্থা রয়েছে, কল্যাণপুর তার অন্যতম। কিন্তু এই ব্লকের যে তিনটি পঞ্চায়েত পুরোদস্তুর শহরে পরিণত হয়েছে, সেই বাগনান ১, বাগনান ২ ও খালোড় পঞ্চায়েতে এই ব্যবস্থা শুরুই হয়নি।
অথচ, বছর দশেক আগে এই তিনটি পঞ্চায়েতকে নিয়ে বাগনান পুরসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই তিন পঞ্চায়েতে হু হু বাড়ছে শপিং মল, আবাসন, অনুষ্ঠান বাড়ি। ফলে জমছে বর্জ্য। সেগুলি ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। ফলে রাস্তার ধারে জমছে বর্জ্যের পাহাড়। বাড়ছে পরিবেশ দূষণ।
এ বিষয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি পঞ্চানন দাসের দাবি, ‘‘খালোড় পঞ্চায়েতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত আছে। যে কোনও দিন চালু হয়ে যাবে। বাগনান ১ এবং ২ পঞ্চায়েতেও এই ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে।’’
কার্যত শহরে পরিণত হওয়া এই তিনটি পঞ্চায়েতে আরও সমস্যা আছে। নিকাশি ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বৃষ্টি হলেই বাগনান কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, বেড়াবেড়িয়া, এনডি ব্লক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বাসস্ট্যান্ডের ধার ঘেঁষে চলে গিয়েছে গোশুড়ো খালের একটা অংশ। এই খালটি দামোদর থেকে বেরিয়ে রূপনারায়ণে মিশেছে। কিন্তু মুরালিবাড়ের কাছে কালভার্টের জন্য সেখান দিয়ে জল নিকাশি হয় না বললেই চলে। বাসস্ট্যান্ডে আবার দোকানিরা খালের উপরে বর্জ্য ফেলেন। সে কারণে এটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সইদুল মিরের কথায়, ‘‘মুরালিবাড়ের কালভার্ট সঙ্কীর্ণ হয়েছে ওই জায়গায় রেলওয়ে উড়ালপুল করার জন্য। খাল প্রতি বছর বর্ষার আগে সাফ করা হয়। বিডিও অফিস থেকে মানকুর মোড় অবধি নিকাশি নালা ৮০ লক্ষ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয়েছে। তার ফলে জল জমার সমস্যা অনেকটা কমেছে। তবে সমস্যা পুরোপুরি মেটাতে মাস্টারপ্ল্যান দরকার। সেটাও করা হবে।’’
শহরের আরও একটি সমস্যা, যত্রযত্র গজিয়ে ওঠা বহুতল। অভিযোগ, সরকারি নানা নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রোমোটারদের হাত ধরে শহর ছেয়ে গিয়েছে বহুতলে। নিকাশির দিকে নজর রাখা হচ্ছে না। দমকলের গাড়ি কী ভাবে ঢুকবে, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে না।
বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেনের সাফাই, ‘‘প্রোমোটারেরা অনলাইনে অনুমতি নিয়ে বহুতল বানাচ্ছেন। স্থানীয় ভাবে আমাদের কিছু করার থাকছে না। তবে বড় কোনও অভিযোগ থাকলে আমরা তা পরিদর্শন করি। ত্রুটি সংশোধন করার জন্য বহুতল মালিকদের বলি।"
এই তিনটি পঞ্চায়েতে অবশ্য প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌছে দেওয়া হয়েছে। এটাকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে মনে করেন সমিতির কর্তারা। বাসিন্দারাও তা স্বীকার করেন। তবে তাঁদের অভিযোগ, যথেচ্ছ জল অপচয়ও হচ্ছে। সমিতির জল বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষ সমীর সামন্ত বলেন, "জলের অপচয় বন্ধ করতে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে।"
এই তিনটি ছাড়া বাকি সাতটি পঞ্চায়েতেও বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এই সব পঞ্চায়েতে সব জায়গায় সমান ভাবে জল যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ ব্যবস্থার পুরো প্রক্রিয়া সব জায়গায় শেষ হয়নি। তাই কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। উন্মুক্ত জায়গায় শৌচকর্ম অনেকটা কমেছে বলেও সমিতির দাবি।
নিজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে শহরে পরিণত হওয়া তিনটি পঞ্চায়েত অনেকটা এগিয়ে থাকলেও অন্যান্য পঞ্চায়েত বেশ পিছিয়ে। বাঙালপুর, হাটুরিয়া ১ ও ২, সাবশিট, বাইনান, কল্যাণপুর, বাকসি পঞ্চায়েত নিজস্ব আয়ে বেশ পিছিয়ে। সভাপতির দাবি, ‘‘এই সব পঞ্চায়েতে আয়ের মাধ্যম কম। তবে নানা ভাবে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।"