রমেশ মাহাতো। ফাইল ছবি
তোলা চেয়ে ফোন যাচ্ছে জেল থেকেই!
হুগলির ‘ত্রাস’ রমেশ মাহাতো এবং তার দলবলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এমন অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। জেলে বসেই তোলাবাজির অভিযোগে রমেশ-সহ পাঁচ দুষ্কৃতীকে তারা হেফাজতে নিয়েছে।
পুলিশ জানায়, কোন্নগরের এক বাসিন্দা থানায় অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতীরা জেল থেকেই বাড়ি করার জন্য তাঁর কাছে মোবাইলে মোটা টাকা তোলা দাবি করে। তারপরই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। আদালতের নির্দেশে শুক্রবার বারুইপুর জেল থেকে ছ’দিনের জন্য রমেশ, রাজকুমার চৌধুরী ওরফে চিকুয়া, দেবাশিস সরকার ওরফে গুজিয়া, মহম্মদ সাবির এবং সন্তোষ চৌধুরীকে পুলিশ হেফাজতে চুঁচুড়া থানায় আনা হয়। চার জনই রমেশের শাগরেদ বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘উত্তরপাড়া থানা এলাকায় একটি তোলাবাজির ঘটনার তদন্তে বারুইপুর জেল থেকে রমেশ-সহ অন্য দুষ্কৃতীদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে।’’ তবে কত টাকা ওই দুষ্কৃতীরা দাবি করেছিল, কমিশনারেটের কর্তারা সংবাদমাধ্যমের কাছে তা খোলসা করেননি।
পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, জেল থেকে রমেশবাহিনীর তোলাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই চিকুয়া, নেপু, আক্রমেরা সহ-বন্দিদের মোবাইল থেকে ফোন করে হুমকি দিয়ে তোলাবাজি চালিয়ে আসছে। ফোনে পাঠানো নির্দেশ অনুযায়ী জেলের বাইরে থাকা শাগরেদরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা তুলে আনে। কখনও ব্যবসায়ীকে পৌঁছে দিতে হয়। ‘জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই’-এর সাহস না-থাকায় অনেকেই তা দিয়ে দেন।
বছর কয়েক আগে এ নিয়েই হুগলি জেলে ওই দুষ্কৃতীরা ধুন্ধুমার বাধায়। এক বার উত্তরপাড়ার মাখলার এক প্রোমোটারকে নির্মীয়মাণ আবাসনের ছাদের ‘ফুট’ মেপে রমেশের দলবল মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। ওই প্রোমোটার টাকা দিতে অরাজি হন। তার জেরে তাঁকে বিপাকে পড়তে হয়।
বালি-নিশ্চিন্দার বাসিন্দা রমেশ বছর ছয়েক আগে একই সঙ্গে দুই মেয়ের বিয়ে দেয়। সেই ‘মেগা’ বিয়েতে উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, চুঁচুড়া, বালি, বেলুড়ের শাসক দলের অনেক নেতা, বামনেতাও পাত পেড়ে খেয়ে যান। পরে অবশ্য রমেশ এলাকাছাড়া হয়। গোয়ায় ঘাঁটি গাড়ে। বছর কয়েক আগে দিল্লি রোড ধরে বালিতে ঢোকার পথে সিঙ্গুরের বড়ায় পুলিশ দুই শাগরেদ-সহ রমেশকে ধরে।
কিন্তু গরাদের পিছন থেকেও কুখ্যাত এই সমাজবিরোধীর ‘লম্বা হাত’ পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।