বৃহস্পতিবার ভোরে ছটপুজো উপলক্ষে চাঁপদানির ইন্দিরা ময়দান ঘাটে ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ছটপুজোয় ভোর ৪টে থেকে ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র সবুজ বাজি পোড়ানো যাবে। কিন্তু কোথায় কী! সার্বিক ভাবে দাপট কিছুটা কমলেও ছটপুজোয় শব্দবাজি এবং আতশবাজি থেকে রেহাই পেল না হুগলি জেলা। তোয়াক্কা করা হয়নি সময়সীমারও। গ্রামীণ হাওড়ার পরিস্থিতি অবশ্য তুলনায় অনেক
ভাল ছিল।
বৃহস্পতিবার ভোরে হুগলিতে গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে ভালই বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। সাহাগঞ্জে রাতভর বাজি ফেটেছে। একই পরিস্থিতি হয় বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণীর ঘাটেও। ডিজেও বেজেছে। সাহাগঞ্জের বাসিন্দা তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান
মঞ্চের কর্মী সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘বাজির শব্দে রাতে ঘুমের দফারফা হয়েছে। পরিবেশেরও।’’
বাঁশবেড়িয়া শহরে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই বাজি ফাটতে শুরু করে। বিশেষ করে বালির ঘাটে। আতশবাজিও কম পোড়েনি। ভদ্রেশ্বরেও রাতভর বাজি ফেটেছে। শহরবাসীর অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই কানফাটানো আওয়াজে অস্থির হতে হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বাজি ফাটায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। শেওড়াফুলির ছাতুগঞ্জ ঘাটে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টে
থেকে কয়েক ঘণ্টা লাগাতার
বাজি ফেটেছে পুলিশের সামনেই। বৈদ্যবাটীর শ্যাম চ্যাটার্জি ঘাটে শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে পুণ্যার্থীদের বচসা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।
ডিজে এবং বাজির দৌরাত্ম্য বন্ধে হুগলিতে বেশ কিছু সংগঠন মিলে মঞ্চ গড়েছে। বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার ভোরে কয়েকটি জায়গা থেকে তাদের কাছে বাজি ফাটার এবং ডিজে বাজার অভিযোগ মিলেছে। শ্রীরামপুরের এক বাসিন্দার গলায় রীতিমতো বিরক্তি, ‘‘ভোর থেকে লাগাতার বাজি ফেটেছে। এগুলো সবুজ বাজি?’’ অনেকেরই আবার বক্তব্য, অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজির প্রকোপ এ বার কম ছিল। সার্বিক সচেতনতা এবং প্রশাসনের তৎপরতা বাড়লে এই দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যুক্তিমন কলা ও বিজ্ঞান কেন্দ্র নামে কোন্নগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বৃহস্পতিবার ভোরে সংস্থার সদস্যেরা উত্তরপাড়া এবং কোন্নগর শহরের বিভিন্ন ঘাট পরিদর্শন করেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, খুব অল্প বাজি পুড়েছে। ডিজে বাজেনি।
ওই সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত পাঁজা বলেন, ‘‘ফুলঝুরি, তারাবাতির মতো কিছু বাজি পুড়েছে। কোন্নগরের একটি জায়গায় যুবক-যুবতীদের থেকে বাজি কেড়ে নিতেও দেখেছি পুলিশকে। এই তৎপরতা সর্বত্র দরকার।’’ আদালতের নির্দেশের বাইরে বাজি যাতে না পোড়ানো হয়, তার জন্য বুধবার পুলিশ এখানে মাইকে প্রচার করে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফেও প্রচার করা হয়। ঘাটে এ নিয়ে পোস্টারও সাঁটা হয়। বাজি নিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতা হলেও কোনও জায়গাতেই অবশ্য দূরত্ববিধি মানার বালাই ছিল না। বহু লোক মাস্ক না পরেই উৎসবে শামিল হন।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় বৃহস্পতিবারেও দূরত্ববিধির বালাই ছিল না গঙ্গার ঘাটগুলিতে। মাস্ক পরার তোয়াক্কাও বহু মানুষ করেননি। তবে ডিজে বা শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ছিল না বললেই চলে। গ্রামীণ এলাকায় বেশিরভাগ ছটপুজো হয় বাউড়িয়া এবং চেঙ্গাইলের চটকল অধ্যুষিত এলাকায়। উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্তাদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মাইকে বারবার ঘোষণা করা হয়। অনেকেই তা মেনেছেন।