চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার বাসিন্দা অয়ন শীল। — নিজস্ব চিত্র।
হুগলির চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার বাসিন্দা অয়ন শীল। নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির হাতে অয়ন গ্রেফতার হওয়ার পর হতবাক তাঁর প্রতিবেশীরা। ‘ভদ্রলোক’ অয়ন যে এমন কাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন তা মানতে পারছেন না কেউই। অয়নের বাবা এক সময় ছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী। এখনও গৃহশিক্ষকতা করেন ওই বৃদ্ধ। অয়নের গ্রেফতারের পর থেকে তালাবন্ধ তাঁদের বাড়ির দরজা। বন্ধ রয়েছে সদানন্দের পড়ানোও।
চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন অয়ন। সেখানে দোতলা বাড়ি তাঁদের। সেই বাড়িই এখন হয়ে উঠেছে মফস্সল চুঁচুড়ার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিছু দিন আগে চুঁচুড়া ছেড়ে অয়ন চলে গিয়েছিলেন সল্টলেকের ফ্ল্যাটে। ছেলের পড়াশোনার জন্য স্ত্রী থাকেন দিল্লিতে। তবে জগুদাসপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁদের। অয়নের কথা উঠতেই অবাক হচ্ছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। অয়নের হালকা আকাশি এবং গোলাপি রঙের বাড়ির পাশেই থাকেন মঞ্জুলা দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ওকে দেখে আমরা কোনও দিন কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। অয়নদা পাণ্ডুয়ার পঞ্চায়েতে কাজ করত। ও চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল কি না তাও জানি না। তবে বাড়িতে কাউকে কোনও দিন আসতে দেখিনি। তবে এক বার কানাঘুষো শুনেছিলাম অশান্তির কথা। কিন্তু দেখে খারাপ মনে হত না কখনও। পাড়ার পুজোয় থাকত। তবে আমরা খবরে এ সব দেখে খুব অবাক হয়ে গেলাম।’’
বিস্ময়ের সুর অয়নের আর এক প্রতিবেশী অনিতা অগস্তির গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘দাদা-বৌদি (অয়ন এবং তাঁর স্ত্রী) ভাল ব্যবহার করতেন। ওঁরা বাড়ি থেকে ফ্ল্যাটে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু উনি যে এ ভাবে টাকা নিতেন তা আগে কোনও দিন শুনিনি। খবরে জানতে পারলাম।’’ অনিতার দাবি, ‘‘এখন কার দিনে অর্থ হলে অনেকেই রাজকীয় ভাবে জীবন কাটান। কিন্তু ওঁর ঠাটবাট দেখিনি কোনও দিন। আমাদের কাউকে কোনও দিন চাকরি করে দেওয়ার কথাও বলেননি।’’
জগুদাসপাড়ার ওই বাড়িতে এখন থাকেন অয়নের বাবা সদানন্দ শীল এবং মা অমিতা শীল। চাকরি জীবন থেকে অবসরের পর গৃহশিক্ষকতা করেন অশীতিপর সদানন্দ। বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি পড়ান তিনি। অয়নের ফ্ল্যাটে ইডির তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ার সময় থেকেই পড়ানো বন্ধ রেখেছেন সদানন্দ। আগে বাইরে দেখা যেত সনদানন্দ এবং অমিতাকে। ছেলের গ্রেফতারের পর থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন করেছেন সব যোগাযোগ। দরজা তালাবন্ধ। এমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। ঝর্ণা রায় নামে তাঁদের এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘অয়নের বাবা ও মা অমাইক মানুষ। ওঁরা এত দিন আছেন কারও সঙ্গে কোনও অশান্তি দেখিনি কোনও দিন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা খবরে অয়নের দুর্নীতির কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম, প্রোমোটিং করে ওর এই উন্নতি। এখন শুনছি অন্য কিছু।’’