সাঁকরাইলের রানিহাটিতে মুম্বই রোডের ধারে বসেছে বাজার । — নিজস্ব চিত্র।
কে বলবে জাতীয় সড়ক!
এ পথে বারবার থমকায় গাড়ির চাকা। কোথাও রাস্তার ধারে পড়ে থাকে ইট-বালি, কোথাও বসে বাজার, কোথাও ‘বেআইনি’ পার্কিং। যেন পাড়ার রাস্তা!মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়েও দ্রুত গতিতে যাওয়ার উপায় নেই হাওড়ার মুম্বই রোডে। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। দুর্ঘটনা অব্যাহত। দেখার কেউ নেই!
এই ‘নৈরাজ্যের’ জন্য জাতীয় সড়ক সংস্থা (এনএইচএআই) পুরো দায় চাপিয়েছে পুলিশের উপরে। তাদের বক্তব্য, জবরদখল হটানো এবং রাস্তার ধার থেকে ইমারতি দ্রব্য সরানোর জন্য পুলিশের সহায়তা দরকার। কিন্তু বার বার চাওয়ার পরেও পুলিশের সহায়তা মেলে না বললেই চলে। তার জেরে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। পুলিশ অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, চাইলেই পুলিশ সহায়তা করে।
বালির মাইতিপাড়া থেকে কোলাঘাট— হাওড়া জেলায় মুম্বই রোডের বিস্তার প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ছ’লেনের রাস্তাটির বেশিরভাগ অংশ পড়ছে গ্রামীণ হাওড়ায়। এনএইচএআই-এর কর্তারা মানছেন, জেলায় এই জাতীয় সড়কের দু’দিকের বেশিরভাগ অংশই জবরদখল হয়ে গিয়েছে। বেআইনি নির্মাণও হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এমনকি, যানবাহনের ‘লেন’ পরিবর্তন করার জন্য এই সড়কে নির্দিষ্ট ‘মেডিয়ান কাট’ থাকা সত্ত্বেও বহু জায়গায় ‘বেআইনি’ ভাবে প্রচুর ‘কাট’ বানানো হয়েছে। যাতে সহজে ‘লেন’ পাল্টানো যায়। বহু কারখানার সামনেও ‘বেআইনি কাট’ হয়েছে। সব মিলিয়ে তার সংখ্যা অন্তত ৫০ বলে তাঁদের দাবি।
এনএইচএআই-এর কর্তাদের বক্তব্য, মূলত কারখানা মালিকদের একাংশই ওইসব ‘কাট’ বানিয়েছেন। যাতে তাঁদের পণ্যবাহী ছোট গাড়ি সহজেই কারখানায় যাতায়াত করতে পারে। সেইসব ‘কাট’ এলাকাবাসীও ব্যবহার করছেন। যত্রতত্র এই ভাবে ‘লেন’ পরিবর্তন করার ফলেও নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।
যে কোনও দিন হাওড়ায় মুম্বই রোড ধরে যাতায়াত করলেই দেখা যাবে, কত জায়গায় যে দু’ধারে দোকান-বাজার বসছে, তার ইয়ত্তা নেই! ক্রেতাদের ভিড় চলে আসছে রাস্তায়। বহু জায়গায় ‘লেন’ ডিভাইডারের লোহার রেলিং উধাও। ফাঁক গলে লোকজনের যাতায়াত চলছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। নানা মোড়ে যাত্রী তুলতে অটো-টোটো, ইঞ্জিনভ্যানের ভিড়।
ইট-বালি-পাথরে স্তূপেরও দেখা মেলে নানা জায়গায়। ওই সব ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এবং যাঁরা বাড়ি বানাচ্ছেন। জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময়ে ওই সব ইট-বালির জন্য বেশি দুর্ঘটনায় পড়ছেন মোটরবাইক আরোহীরা। বিভিন্ন দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বড় গাড়িকে ‘পাস’ দিতে গিয়ে বাইক আরোহীরা চাইলেও ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকার জন্য রাস্তার ধারে সরতে পারছেন না। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।সমস্যার এখানেই শেষ নয়। সড়কের দু’ধারের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সার্ভিস রোড রয়েছে। সেখান দিয়ে অটো, টোটো, ইঞ্জিনভ্যানের মতো ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারে। কিন্তু সেই সার্ভিস রোড বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাক পার্কিংয়ের জায়গা। ফলে, টোটো-ইঞ্জিনভ্যানের মতো ধীর গতির যানবাহনও উঠে পড়ছে জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনা ঘটছে।
এনএইচএআই জানিয়েছে, উলুবেড়িয়ায় তাদের তরফে ট্রাক পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। সেখানে নিখরচায় গাড়ি রাখাযায়। সার্ভিস রোডে ট্রাক পার্কিং বেআইনি। পুলিশের যোগসাজশেই ওই বেআইনি পার্কিং চলে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। (চলবে)