গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতি তুঙ্গে ছিল বিজেপি-র। কারণ, হুগলির সাহাগঞ্জের মাঠে ২২ তারিখ, সোমবার সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারবার তাই জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতারা সভার আয়োজন খতিয়ে দেখছিলেন। বুধবার সকালে সেই মাঠে হাজির হলেন তৃণমূলের নেতারাও। কারণ, মোদীর সভার ৪৮ ঘণ্টা পর, ২৪ ফেব্রুয়ারি, বুধবার ওই মাঠেই সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এত কম সময়ের ব্যবধানে, একই মাঠে যুযুধান দু’পক্ষের সভায় দু’দলের শীর্ষতম নেতৃত্বের উপস্থিতির নজির খুব একটা দেখা যায় না। দেখে গেলেও সময়ের দূরত্ব থাকে বেশ কিছুটা। এ ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনের সভা হতে চলেছে। একই মাঠে এক দিন উঠতে চলেছে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। আর তার ৪৮ ঘণ্টা পরে, ‘জয় বাংলা’।
বুধবার তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব, মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্র, বিধায়ক অসিত মজুমদার কয়েক’শ তৃণমূল কর্মীকে নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করেন। দিলীপ বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নের কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী হয়ত আরও বেশ কয়েকবার আসবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ জানেন, উনি বাংলার মানুষের কোনও উপকার করেননি। বাংলার সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে নষ্ট করেছেন। বাংলার অর্থনীতিকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করেছেন। যিনি বাংলার উন্নয়ন করেছেন, তাঁর নাম মমতা বন্দোপাধ্যায়।’’
সভাস্থলে আয়োজন দেখতে সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপি। নিজস্ব চিত্র
পাল্টা মাঠ পরিদর্শনের কর্মসূচি থেকেই মমতা ও তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি-ও। তাদের দাবি— তৃণমূল ‘ভয় পেয়ে’ একই মাঠে সভা আয়োজন করেছে। হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এত ভয় কেন প্রধানমন্ত্রীকে? লোকসভা ভোটে হুগলি কেন্দ্রে হেরেছে। বিধানসভা ভোটে জেলায় আসন শূন্য হবে তৃণমূলের।’’ প্রসঙ্গত, মোদীর সভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হুগলিতেই ঘাঁটি গেড়ে থাকবেন লকেট। এমনই বক্তব্য তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলির তিনটি আসনের মধ্যে হুগলি কেন্দ্রে জিতেছিলেন লকেট। শ্রীরামপুর এবং আরামবাগ কেন্দ্রে জিতেছিল তৃণমূল। লোকসভার ফলের ভিত্তিতে বিধানসভা কেন্দ্র বিচার করলে দেখা যাচ্ছে ১০টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ৮টিতে এগিয়ে বিজেপি। ফলে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি।
সভাস্থলে আয়োজন দেখতে তৃণমূল নেতৃত্ব । নিজস্ব চিত্র
বুধবার লকেট কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘মোদীজিকে নকল করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উচিত ছিল আগে সভা করা। যা-ই হোক, তৃণমূলের নেত্রী যেমন একই মাঠে সভা করে প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করছেন, তেমনই তাঁর দলের কর্মীরাও বিজেপি-কে অনুসরণ করবেন।’’ প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। হেলিপ্যাড তৈরির জন্য জঙ্গল সাফাইও শুরু হয়েছে। এককথায়, গোটা এলাকায় সাজ-সাজ রব। মঙ্গলবারই মোদীর সভার জন্য নির্দিষ্ট এসপিজি মাঠ দেখে গিয়েছেন চন্দননগর কমিশনারটের ডিসি তথাগত বসু এবং এসিপি পলাশ ঢালি।
বসে নেই তৃণমূলও। প্রধানমন্ত্রীর সভার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি হিসাবে মাঠের পাশের গাছ তৃণমূলের পতাকায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শুধু বিজেপি নেতৃত্বের বিচরণ ছিল যে মাঠে, সেখানেই বুধবার থেকে তৃণমূলেরও আগমন ঘটল। উত্তাপ চড়ছে হুগলির।