হাওড়ায় রামনবমীর মিছিলে সম্প্রীতির ছবি। — নিজস্ব চিত্র।
রামনবমীর উৎসবকে ঘিরে সাম্প্রতিককালে এই জেলা হানাহানি দেখেছে অনেক। দেখেছে, রামের মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবকদের দাপাদাপি। দেখেছে, মিছিল লক্ষ্য করে ছুটে আসা ইট, পাটকেল, ধোঁয়া, আগুন। সেই জেলাই অবাক হয়ে দেখল, রামনবমীর মিছিলের জন্য অপেক্ষা করছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। মিছিল আসতেই হাতে হাতে পৌঁছে গেল ‘মহব্বত কা শরবত’। ভালবাসায় আর সৌভ্রাতৃত্বে হাওড়ার পিলখালায় পালিত হল রামনবমী।
উত্তর হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার অন্তর্গত পিলখানায় দেখা গেল সম্প্রীতির ছবি। এই এলাকায় মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস। আবার এই এলাকায় রামনবমীর উৎসবও বহু পুরনো। দীর্ঘ দিন ধরেই এখানে রামনবমীর উৎসব পালন করে আসছেন মানুষ। কোথাও কোনও গোলমাল নেই। কিন্তু ইদানীং দেশের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক আবহে সেই রামনবমীই দখল করে রেখেছে শিরোনাম, সম্পূর্ণ ভুল কারণে। সেই ভুল ভাঙিয়ে দিল পিলখানা। মুসলিম অধ্যুষিত এই এলাকা দিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বারও রামনবমীর শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু আর পাঁচটা জায়গার সঙ্গে পিলখানার পার্থক্য হল, এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের হাতে ছিল শরবতের গ্লাস, ঠান্ডা জলের বোতল। মাথার উপর সূর্যের তাপ যত বেড়েছে, অপেক্ষার প্রহর ততই লম্বা হয়েছে। কিন্তু নড়েননি কেউ।
ঘড়িতে সময় তখন দুপুর ২টো। খবর আসে, মিছিল আসছে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু সাজসাজ রব। পিলখানা মোড়ে মিছিল পৌঁছতেই একে অপরের গলা জড়িয়ে আলিঙ্গন করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ঠান্ডা পানীয় ও জল তুলে দেওয়া হয় রামভক্তদের হাতে। শামিল হন মহিলারাও। পিলখানার আদি বাসিন্দা আবুল হাসান বলেন, ‘‘এই ঠান্ডা পানীয় আসলে ‘মহব্বত কা শরবত’। আমরা চাই সারা দেশে সম্প্রীতি বজায় থাকুক। হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই।’’ শোভাযাত্রার আয়োজক বিবেক সোনকার জানান সংখ্যালঘু ভাই, বোনেদের আপ্যায়নে তাঁরা অভিভূত। তিনি বার বার জানান যে, এখানে হিংসার কোনও ব্যাপার নেই। এই সম্প্রীতির বাতাবরণ সারা বছর অটুট রাখতে হবে বলেও এ দিন পণ করেন উদ্যোক্তারা।