—প্রতীকী ছবি।
অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন তারকেশ্বরের বিধায়ক তথা আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি রামেন্দু সিংহরায়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ নিয়ে রামেন্দুর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন শুধু নয়, আরামবাগ থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে বিজেপির তরফে। রামেন্দু অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়।
আগামী ১০ মার্চ ব্রিগেডের সভা রয়েছে তৃণমূলের। এ নিয়ে রবিবার তারকেশ্বরে দলের প্রস্তুতি সভায় রামেন্দু রামমন্দিরকে ‘অপবিত্র’ বলে দাবি করেন। রামেন্দুর বক্তব্যের ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) সোমবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন শুভেন্দু। তাতে রামেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যে রামমন্দির তৈরি হয়েছে, আমি মনে করি অপবিত্র ওই রামমন্দিরে ভারতবর্ষের কোনও হিন্দু যেন পুজো দিতে না যান। ওটা একটা শো-পিস তৈরি হয়েছে।’’
রামেন্দুর এই মন্তব্যের নিন্দা করে শুভেন্দু নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের আসল প্রকৃতি। হিন্দুদের আক্রমণ করতে করতে তাদের দুঃসাহস এতাটাই বেড়ে গিয়েছে যে এখন তারা হিন্দুদের পবিত্র পীঠস্থান, সেই মন্দিরকে ‘অপবিত্র’ আখ্যা দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে’। এর পরেই রামেন্দুর মন্তব্য তুলে শুভেন্দু লেখেন, ‘আমি শুধুমাত্র ওঁর এই অবমাননাকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেই বিরতি থাকছি না। এমন ঘৃণ্য বিবৃতি দিয়ে বিশ্বের হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
সোমবার সন্ধ্যায় রামেন্দুর বিরুদ্ধে আরামবাগ থানায় এফআইআর করেন বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ও রাজ্য সম্পাদকতথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘রামমন্দির নিয়ে তারকেশ্বরের বিধায়কের কুরুচিকর মন্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি। জেলার বিভিন্ন জায়গায় এর প্রতিবাদও করা হবে।’’ পুলিশের বক্তব্য, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে রামেন্দু বলেন, ‘‘এটা অগেও বলেছি, এখনও বলছি, পরেও বলব। এফআইআর করলে করুক।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘হিন্দু ধর্মে মন্দির প্রতিষ্ঠায় যাঁরা আমাদের পুরোহিত, তাঁরাই বিধান দেন। হিন্দু ধর্মের চার শঙ্করাচার্য বলেছিলেন, অসম্পূর্ণ মন্দিরে কোনও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কিন্তু একপ্রকার জোর করে অসম্পূর্ণ মন্দিরে তা করা হল একমাত্র রাজনৈতিক কারণে। এটা করে হিন্দু ধর্মকে অপমান তো মোদী করলেন।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদাই কিছুদিন আগে ওই মন্দির উদ্বোধন করেন।
রামেন্দুর মন্তব্যে তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ এবং স্থানীয় সাংসদ অপরূপা পোদ্দারও কিছুটা বিব্রত। সাংসদ বলেন, ‘‘এটা রামেন্দুবাবুর নিজের মতামত। রামমন্দির নিয়ে যদি কিছু বলার থাকে, দিদিই (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বলবেন।’’ জেলা নেতাদের অনেকেই মনে করেন, রামমন্দির নিয়ে এমনিতেই বিজেপি কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় আছে। এই অবস্থায় ওই প্রসঙ্গ তোলা কার্যত অন্তর্ঘাতের শামিল!
গত ১০ ফেব্রয়ারি বিধানসভায় বাজেট নিয়ে আলোচনার সময়ে শুভেন্দুকে ‘চোর’ বলে আক্রমণ করেছিলেন রামেন্দু। পাল্টা শুভেন্দুও কু-কথা বলেন। শুনে শুভেন্দুর দিকে তেড়ে যান রামেন্দু। শুভেন্দু পাল্টা তেড়ে গেলে পরিস্থিতি তেতে ওঠে। এ বার রামমন্দির নিয়ে রামেন্দুর বক্তব্য ঘিরে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা।