সদলবলে: গ্রামের জলাশয়ে নিশ্চিন্তে ভেসে বেড়াচ্ছে বালিহাঁসের দল। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে বলাগড়ের সোমড়া-১ পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর বালিহাঁস অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাগে পেয়ে পরিযায়ী ওই পাখি ধরার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। অনেকেই পাখি মেরে রান্না করেন বলে অভিযোগ। বন দফতর এবং পাখিপ্রেমীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলেছে। গ্রামের পুকুরে নিরাপদে রয়েছে অসুস্থ অনেক বালিহাঁস। জলে তাঁদের ঘুরে বেড়ানো দেখে দু’দিন আগের থেকে অনেক সতেজ বলে মনে হচ্ছে পাখিপ্রেমীদের।
পাখিগুলির ডানায় ক্ষত রয়েছে। ডানার পালক খসে যাচ্ছিল। উড়তে পারছিল না। অসুস্থতার কারণ জানতে কয়েকটি পাখিকে বেলগাছিয়ায় পশু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বন দফতর সূত্রের খবর, সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। তারা সুস্থই আছে। তবে, অসুস্থতার কারণ নিয়ে রিপোর্ট শনিবার পর্যন্ত আসেনি।
বন দফতরের ধারণা, ভাইরাসঘটিত কারণে পাখিগুলি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে। এই সময় খেত থেকে পাট তুলে পচানো হয়। তা থেকে ছত্রাকঘটিত রোগ হতে পারে। রিপোর্ট এলে, স্পষ্ট ভাবে বলা সম্ভব হবে বলে বনকর্তারা জানিয়েছেন। ওই পাখিদের থেকে মানুষের শরীরে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
হাওড়ার অতিরিক্ত বিভাগীয় বনাধিকারিক (এডিএফও) দেবরাজ শূর, হুগলির রেঞ্জ অফিসার রাজেশ মুখোপাধ্যায়, বিট অফিসার সোমেশ ভট্টাচার্য ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। দফতরের কর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। তাঁরা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা মানুষকে সচেতন করছেন, কেউ যাতে পাখিগুলিকে বিরক্ত না করে। এক বনকর্তা বলেন, ‘‘আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই নিজে থেকেই পাখিগুলি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। আগের মতোই ওড়াউড়ি করবে। কেউ বিরক্ত না করলেই হল।’’ এলাকাবাসীদের দাবি, এখন আর কেউ পাখিগুলিকে বিরক্ত করছেন না। বন দফতরের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও এ ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখছেন।
স্থানীয় কোরলা এলাকার বাসিন্দা, পাখিপ্রেমী আশিস সাঁতরা বুধবার থেকে প্রতিদিনই এলাকায় যাচ্ছেন। পাখিগুলিকে বাঁচানোর আর্জিতে তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘বন দফতরের কর্মীরা প্রতিদিনই নজরদারি করছেন, কেউ যাতে পাখির ক্ষতি না করে। মানুষও সচেতন হয়েছেন।’’ ওই এলাকা ঘুরে এসে জিরাটের বাসিন্দা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রথমে মাংসের লোভে কিছু মানুষ পাখি ধরছিলেন। প্রচারের ফলে অনেকেই বুঝেছেন, ওদের রক্ষা করতে হবে। মানুষের নাগালে থাকলেও পাখিগুলো এখন নিরাপদ, এটাই সুখের কথা।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, পছন্দের বাসস্থান পেয়ে বহু বালিহাঁস বলাগড় ব্লকের ওই এলাকায় গঙ্গার চরে সংসার পাতে। মঙ্গলবার, নবমী থেকে শ’য়ে শ’য়ে বালিহাঁস অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওড়ার ক্ষমতা হারায়। পাইগাছি-সহ আশপাশের গ্রামে পুকুরে এসে আশ্রয় নেয়। লাঠি, গুলতি, জাল দিয়ে পাখিগুলিকে ধরতে থাকেন অনেকে। আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে চলে আসেন। পাখিপ্রেমীদের নজরে বিষয়টি আসতেই পরিস্থিতি বদলায়। গ্রামে আসেন বন দফতরের লোকজন। এলাকার বেশ কিছু বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া অনেক পাখি উদ্ধার হয়। সেগুলিকে এলাকার একটি বড় পুকুরে রাখা হয়।