বদলাল না মঙ্গলাহটের দিন। — ফাইল চিত্র।
হাওড়ার মঙ্গলাহাটের দিন বদলে শনি ও রবিবার করার যে প্রস্তাব জেলা প্রশাসন এবং পুরসভা দিয়েছে, তা নিয়ে একমত হতে পারলেন না সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে, শুক্রবার হাওড়া পুরসভায় পুর চেয়ারপার্সনের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকে সমাধানসূত্র বেরোয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য হাট ব্যবসায়ীদের এক মাস সময় দিয়েছে হাওড়া পুরসভা।
হাট ব্যবসায়ীদের একাংশের মত, মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে শনি ও রবিবার হাট বসানোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য। অন্য পক্ষের মতে, বহু ব্যবসায়ী রবিবার অন্য হাটে দোকান দেন। শনি-রবিবার হাট বসলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। তা ছাড়া, সোম ও মঙ্গলবার হাট বসার দীর্ঘ ঐতিহ্য নষ্ট হবে। এই মতান্তরের কারণেই এ দিন পুরসভার চেয়ারপার্সনের সঙ্গে বৈঠকে সমাধান বেরোয়নি। এ বিষয়ে সকলের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য হাট ব্যবসায়ীদের এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
কাজের দিনে সোম ও মঙ্গলবার হাওড়া শহরের ফুসফুস হাওড়া ময়দানকে ঘিরে যে লন্ডভন্ড পরিস্থিতি হয়, তা নিয়ে আপত্তি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর পাঁচেক আগে হাওড়ার প্রশাসনিক সভায় গিয়ে তিনি মঙ্গলাহাট নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছিলেন পুরসভাকে। তবু মূল প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, হাওড়া আদালত চত্বর, পুরসভা, পুলিশ কমিশনারেট দফতর ও একাধিক স্কুলকে ঘিরেই মঙ্গলাহাট সোম-মঙ্গল বসছে।
সম্প্রতি হাওড়া ময়দান থেকে চলতি বছরের শেষে মেট্রো চলাচল শুরুর ইঙ্গিত পেয়ে নড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও পুলিশ। পুরসভার তরফে চেয়ারপার্সন একাধিক বৈঠকও করেছেন জেলাশাসক ও নগরপালের সঙ্গে। তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সোম ও মঙ্গলের পরিবর্তে শনি ও রবিবার, ছুটির দিন হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে ব্যবসায়ীদের। ফলে, মেট্রো চালু হলেও হাওড়া ময়দান চত্বর অবরুদ্ধ হবে না।
এই প্রস্তাব নিয়েই এ দিন পুরভবনে হাট ব্যবসায়ী ও হকার সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হয় পুরসভার। বৈঠক শেষে ‘হাওড়া মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মলয় দত্ত বলেন, ‘‘প্রশাসন হাওড়া হাটের দিন বদল নিয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। শনি ও রবি পূর্ণদিবস হাট বসানোর যে প্রস্তাব চেয়ারপার্সন দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য।’’
তবে, ‘হাওড়া হাট সমন্বয় কমিটি’র সম্পাদক কানাই পোদ্দার বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ভেবেই মঙ্গলাহাটের দিন বদলানো যাবে না। সংগঠনে সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’’ ‘হাওড়া প্রগতিশীল হকার ইউনিয়ন’-এর সভাপতি সমর মুখোপাধ্যায়ও প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘যেমন হাট চলছিল, তেমনই চলুক। হকারদের স্বার্থ আমরা সব সময়ে দেখব।’’
পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের এক মাস দেওয়া হয়েছে। মেট্রো চালু হওয়ার পরে ২৫ মিনিট অন্তর যে আড়াই হাজার মানুষ নামবেন, তাঁদের তো যাতায়াতের পথ দিতে হবে।’’