আরাম: প্রখর রোদে দ্বারকেশ্বর নদে দাপাদাপি কিশোর দলের। রবিবার আরামবাগে। ছবি : সঞ্জীব ঘোষ
তিন সপ্তাহ এগিয়ে এনে স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল আগামী ২ মে থেকে। গরমের বাড়াবাড়িতে তারও দুই সপ্তাহ আগেই রবিবার রাজ্যের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তি, আজ, সোমবার থেকে এক সপ্তাহ, অথবা পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না বেরোনো পর্যন্ত ছুটি থাকবে।
হাওড়া এবং হুগলি জেলার শিক্ষা মহলের অনেকেই বলছেন, এই ঘোষণা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে, গরম মোকাবিলায় ছুটির চেনা দাওয়াইয়ের বদলে, বিকল্প ওষুধ খোঁজ করা যেত। আগামী দিনেও অতিরিক্ত গরম পড়লে, একই রাস্তা নেওয়া হবে? এমনিতেই সরকারি সাবেক বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় এঁটে উঠতে পারছে না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এত ছুটি আরও বেশি ক্ষতি করবে না তো? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
হাওড়ার যদুরবেড়িয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা ঘোষ জানার বক্তব্য, এই গরমে পড়ুয়ারা অসুস্থ হতে পারে। ফলে, ছুটির সিদ্ধান্ত সঠিক। স্কুল খুললে, অতিরিক্ত ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করা যাবে। উত্তরপাড়ার মাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুভময় সরকার বলেন, ‘‘লাফিয়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ ছাড়া বিকল্প ছিল না। তবে, পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলেই যেন দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়।’’
সকলে অবশ্য সহমত নন। হুগলির পান্ডুয়া সুলতানিয়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা পাল বলেন, ‘‘সকালে স্কুল হলে, ভাল হতো। করোনা-পর্বে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলছুট বেড়েছিল। তা যাতে না হয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখব।’’ হরিপালের জামাইবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘যাদের গৃহশিক্ষক রয়েছে, তারা তো সকালে পড়তে যাবে। যাদের স্কুলই ভরসা, ক্ষতি তাদের। সকালে তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা স্কুল হলেও, অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যেত।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলেও প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড্ সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেসেস’ (এএসএফএইচএম)-এর রাজ্য সহ-সভাপতি মিনু পাল বলেন, ‘‘পয়লা মে’র পরের ছুটি পুনর্বিবেচনা করা হোক।’’ সংগঠনের হুগলি জেলা সভাপতি প্রণবকুমার নায়েকের বক্তব্য, এখন প্রতি বছরই প্রচণ্ড গরম। ১০ দিন অতিরিক্ত ছুটি হাতে রাখা হোক। পরিস্থিতি অনুযায়ী স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই ছুটি দেবেন।’’ আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অসীম দে বলেন, ‘‘আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা। তার কী হবে, বুঝতে পারছি না।’’ ছুটি ঘোষণা সমর্থন করছে শাসক দলের কলেজ-শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা।
ছুটির ঘোষণা চিন্তায় ফেলেছে অনেক অভিভাবককেও। পান্ডুয়ার বাসিন্দা শেখ লিয়াকত আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘সকালে স্কুল করা উচিত ছিল। মিড-ডে মিল পাবে না বাচ্চারা।’’ নবম শ্রেণির ছাত্রী, গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা স্বর্ণাভা প্রামাণিকের চিন্তা, ‘‘বেশি ছুটি থাকলে, সিলেবাস শেষ হবে না।’’ আরামবাগের নবপল্লির কার্তিক দেবনাথ বলেন, ‘‘মেয়ের পরীক্ষা চলছে। সকালে স্কুল চলবে, জানিয়েছে স্কুল। সঠিক সিদ্ধান্ত।’’ বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছুটির ব্যাপারে আজ, সোমবার সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজাপুরের বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রীতা সেনের বক্তব্য, তাপপ্রবাহে ছুটি ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। ছুটির ব্যাপারে আজ, সোমবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁরা অনলাইন ক্লাসের কথা ভাবছেন।
অনলাইন ক্লাসের প্রশ্নে অবশ্য গ্রামগঞ্জের বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা করোনা-পর্বের কথা উল্লেখ করে, অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা, বহু ছেলেমেয়ে অনলাইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।