প্রতীকী ছবি।
সিঙ্গুরে শাসক তৃণমূল পরিচালিত সমবায়ের টাকা তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ার (হিসাবরক্ষক)। খাসেরচক চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছে ‘ডেপুটি রেজিস্ট্রার অফ কোঅপারেটিভ সোসাইটি’ (ডিআরসিএস)। লিখিত সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সমবায়ের ম্যানেজার সুখেন্দু দাস এবং হিসাবরক্ষক কৌশিক অধিকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার আমনদীপ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে সমবায়ের প্রায় দু’কোটি ২৯ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি।
দীর্ঘ দিন ধরেই সিঙ্গুরের গোপালনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খাসেরচক চকগোবিন্দ সমবায় থেকে জমানো টাকা না পাওয়ার অভিযোগ তুলছিলেন গ্রাহকেরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোপালনগর এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। গরিব মানুষের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরব হচ্ছিল বাম কৃষক সংগঠন। দিন কয়েক আগে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও বিক্ষোভকারী গ্রাহকদের সঙ্গে দেখা করেন। তার মধ্যেই অর্থ তছরুপের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। সমবায় পরিচালন সমিতির সম্পাদক অশোককুমার দাসই প্রথম অভিযোগ তোলেন। এর পর গত ১৬ জুন সিঙ্গুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার হন সুখেন্দু এবং কৌশিক। তাঁদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে চুঁচুড়া স্পেশাল আদালত। পুলিশ সূত্রে খবর, তছরুপের ঘটনায় একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছেন সুখেন্দু এবং কৌশিক। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আর কারা যুক্ত, তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘ডিআরসিএস থেকে একটা অভিযোগ করা হয়। সমবায়ের ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার প্রায় দু’কোটি ২৯ লক্ষ টাকার একটা গরমিল করেছে। তার প্রেক্ষিতে আইপিসি ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় একটি কেস শুরু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কী ভাবে তারা এত টাকা গরমিল করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এই ঘটনায় শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা মধুসূদন দাস বলেন, ‘‘এত বড় ঘটনায় শুধু ম্যানেজার আর ক্যাশিয়ার জড়িত, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। একটা সিস্টেমে কাজ হয় সমবায়ে। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া কোনও কিছু পাশ হয় না। ভোট এসে গিয়েছে বলে এদের গ্রেফতার করে দেখানো হচ্ছে যে, ওরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে। তা হলে এত দিন কেন অ্যারেস্ট করা হয়নি? এই ঘটনায় অন্য যারা জড়িত, তাদেরও ধরতে হবে। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে।’’
বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ধারা বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতিকে অন্ধকারে রেখেই টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। এর সঙ্গে বোর্ড কোনও রকম ভাবে যুক্ত নয়। তদন্তে আইনি পথে যদি বোর্ডের কেউ জড়িত বলে প্রমাণ হয়, সে সাজা পাবে। এতে দল কোনও রকম অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না।’’