আদালতে ধৃত শেখ সাজিদ। —নিজস্ব চিত্র।
হাওড়ার বাঁকড়ার পঞ্চায়েত অফিসে গুলিকাণ্ডে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত শেখ সাজিদ আদালতে দাঁড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেন। তাঁর দাবি, ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তাঁকে এবং তাঁর ভাইকে ফাঁসাতে চাইছেন। একই দাবি করেছেন ধৃতের পরিবারের লোকজন। অন্য দিকে, পুলিশের দাবি, সাজিদই গুলিকাণ্ডের মূলচক্রী। তিনি ভাড়া করা দুষ্কৃতীদের দিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে হামলা করিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার হাওড়ার বাঁকড়া-৩ পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যে ঢুকে পড়ে জনা তিনেক দুষ্কৃতী। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যেই গুলি চালায় তারা। সরাসরি গুলি না লাগলেও এই ঘটনায় পঞ্চায়েত প্রধানের বাবা-সহ মোট দু’জন জখম হন। পঞ্চায়েত প্রধান টুকটুকি শেখকে লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি টেবিলের তলায় বসে পড়েন। পরে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে হাওড়া সিটি পুলিশ প্রথমে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তদন্তে উঠে আসে সাজিদের নাম। ইতিমধ্যে ওই গুলি চালানোর ঘটনায় মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, গুলিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল মোট তিন নেতাকে সাসপেন্ড করে দেয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা বেঙ্গালুর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে সাজিদকে গ্রেফতার করে। বুধবার ধৃতকে বিমানে করে আনা হয় কলকাতায়। সাজিদকে হাজির করানো হয় হাওড়া জেলা আদালতে। সেখানে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন গুলিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। তিনি জানান, চিকিৎসার কারণে বাইরে গিয়েছিলেন। গা ঢাকা দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা করেননি। কিন্তু রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। আদালতের বাইরে একই দাবি করেছেন সাজিদের বোন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান এবং আরও কয়েক জন মিলে আমার ভাইকে ফাঁসিয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতে ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে সাজিদের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজেরও অভিযোগ রয়েছে। সাজিদকে স্থানীয় বিধায়ক কল্যাণ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। যদিও তা অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। তিনিও দলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাও স্বীকার করেননি। বুধবার হাওড়া সিটি পুলিশের জয়েন্ট সিপি কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘এই ঘটনার (গুলি চলার) মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সাজিদ। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি অপারেশনের সময় ব্যবহৃত বেশ কিছু অস্ত্রসস্ত্র এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, সঞ্জয় সিংহ নামে এক অভিযুক্তকে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে হাওড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়াও যশোবন্ত সিংহ নামে আরও এক জনতে বিহার থেকে পাকড়াও করা হয়। পঞ্চায়েত অফিসে হামলার জন্য ওই দুই দুষ্কৃতীকে সাজিদ ভাড়া করেছিলেন বলে তথ্য উঠে এসেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।