চুঁচুড়ার এক সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে বাজছে ডিজে বক্স। নিজস্ব চিত্র
সরস্বতীর আরাধনা হল বিকট শব্দে বক্স বাজিয়ে। হুগলি জেলায় মূলত শিল্পাঞ্চলে বেহিসেবি শব্দের তাণ্ডবে আরও এক বার নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের স্বস্তি দিতে পুলিশ, প্রশাসন থেকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কড়া নাড়ল নাগরিক সংগঠন। তার জেরে কোথাও পুলিশি হস্তক্ষেপে স্বস্তি মিলল। কোথাও আবার উপদ্রব বেড়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
শব্দদূষণের প্রতিবাদ করায় চুঁচুড়ার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝেররাস্তা সাঁকোমোড়ের একটি পরিবারকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় কয়েক জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও সুরাহা না মেলায় পরিবারটি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। মাস ছ’য়েক আগে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, উপদ্রবের প্রতিকার পুলিশকে করতে হবে। বিধিলঙ্ঘন যাতে না হয়, পুলিশকেই তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর পর থেকে ওই এলাকায় মাইক বা বক্সের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, বৃহস্পতিবার ফের আগের পরিস্থিতি ফিরে আসে। রাত পর্যন্ত জোরে বক্স বাজানো হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবারও বক্স বাজছিল। খবর পেয়ে দুপুরে পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে। শ্রীরামপুরের ঝাউতলা এলাকায় জোরে বক্স বেজেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।
চন্দননগরের বারাসত জেলেপাড়ার একটি সরস্বতী পুজোয় বুধবার থেকেই বক্সের তাণ্ডবে আশপাশের লোকেরা অতিষ্ঠ হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ পেয়ে বাজি ও ডিজে বক্স বিরোধী মঞ্চের তরফে যোগাযোগ করা হয় কমিশনারেট বা পুরসভার শীর্ষকর্তাদের। এলাকাবাসীর দাবি, অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ-প্রশাসন বা পুরসভার তরফে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। বক্স বন্ধ হয়েছে। কিন্তু, শুক্রবার ফের সেই তাণ্ডব শুরু হয়েছে। এ দিন শব্দের মাত্রা ছিল বেশি। বিভিন্ন দফতরে জানানোর পরে রাত পৌঁনে ৯টা নাগাদ সেই তাণ্ডব বন্ধ হয়।
এলাকার এক প্রবীণ বলেন, ‘‘দরজা-জানলা বন্ধ করেও থাকতে পারছি না। মানুষের মৃত্যু হলে অথবা নিরুপায় হয়ে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেললে, তখন প্রশাসন কড়া হবে!’’ এক মহিলার কথায়, ‘‘বয়স্ক নাগরিকদের পাশে থাকার বার্তা পুলিশ দেয় ‘স্পর্শ’ নামের ইউনিটের মাধ্যমে। কিন্তু, সংবেদনশীলতার স্পর্শ এ ক্ষেত্রে তো দেখছি না।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিতপ্রসাদ জাভালগি অবশ্য বলেন, ‘‘জোরে বক্স বাজানোর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
বুধবার হুগলির গ্রামীণ এলাকার ধনেখালির নারায়ণপুরে, শুক্রবার হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েত এলাকায় জোরে বক্স বাজানোর অভিযোগ ওঠে। দু’টি ক্ষেত্রেই মঞ্চের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। নারায়ণপুরের ক্ষেত্রে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় বলে মঞ্চের সদস্যরা জানান।
মগরায় প্রতি বছর জাঁকের সরস্বতী পুজো হয়। শুক্রবার স্থানীয় গজঘণ্টা এলাকায় একটি মণ্ডপে তারস্বরে মাইক বাজানোর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মাইকের শব্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘অন্যান্য বছরের তুলনায় জেলায় শব্দের তাণ্ডবের অভিযোগ অপেক্ষাকৃত কম পেয়েছি। কোথাও কোথাও পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু, সর্বত্র সেই ব্যবস্থা বেশিক্ষণের জন্য স্থায়ী হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যের।’’ মঞ্চের সদস্যদের দাবি, নিষিদ্ধ বক্স বাজেয়াপ্ত করে সেগুলি ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এটা না হওয়াতেই শব্দের তাণ্ডব পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না।