পানীয় জলের দাবিতে মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভ জানাচ্ছেন গ্রামবাসী। সোমবার আরামবাগের কাবলে মোড়ে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
প্রবল গরমে জলস্তর নামতে শুরু করেছে দুই জেলার নানা প্রান্তে। সামনে আসছে পানীয় জলের সঙ্কটের কথাও। পানীয় জলের দাবিতে চড়া রোদ মাথায় নিয়ে সোমবার অবরোধ হল দুই জেলার দু’প্রান্তে। এর মধ্যে হুগলির আরামবাগের কাবলের কাছে অবরোধে আটকে পড়েন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন। হাওড়ার বাগনানের কলসডিহি মোড়ে অবরোধ হয়।
এ দিন সকাল ১০টা থেকে প্রায় ৪০ মিনিট কাবলের কাছে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেছিলেন হরিণখোলা-২ পঞ্চায়েতের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দারা। দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার সঙ্গে কলকাতা বা তারকেশ্বর যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বহু মানুষের ভোগান্তি হয়।বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বসানো দু’টি কলই খারাপ। সারানো হয়নি। বছর কয়েক আগে একটি সাবমার্সিবল বসানো হলেও চালু করা হয়নি। ভরসা ছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্প। কিন্তু রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের কাজে কালভার্ট তৈরির সময় সেই পাইপ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এখনও সারানো হল না। ফলে, জল পেতে হয়রান হতে হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিকাশ বারিক ও অর্চনা পোড়েল বলেন, ‘‘কালভার্টের কাজ প্রায় এক বছর আগে শেষ হলেও পাইপ লাইন মেরামত করা হয়নি। পঞ্চায়েত এবং মহকুমা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে একাধিকবার দরবার করেও সুরাহা মেলেনি।’’
পুরুলিয়ার ঝালদায় জনসভায় যাওয়ার পরে অবরোধে আটকে পড়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি ঘটনাস্থল থেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করেন, কয়েকদিনের মধ্যেই পাইপ লাইন সারানো হবে। যতদিন না তা সারানো হয়, ততদিন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর গ্রামবাসীদের জন্য জলের ট্যাঙ্ক পাঠাবে।
মন্ত্রী বলেন, “আগের সাবমার্সিবল চালু করে প্রয়োজনে সেখানে আরও একটি বসানোর জন্য পঞ্চায়েতকে বলেছি। এই গরমে যে কোনও ভাবে মানুষকে জল দিতে হবে বলে দিয়েছি।”মন্ত্রীর আশ্বাসের পরেই অবরোধ ওঠে। তাঁর সুপারিশ মতোই দুপুরে ওই গ্রামে জলেরর ট্যাঙ্ক পাঠায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। মহকুমা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার সৌরভ বিশ্বাস বলেন, “পাইপ লাইন জোড়ার কাজের দরপত্র ডাকা হয়ে গিয়েছে। ইদের পরেই কাজ শুরু হবে। ততদিন পুরসভার সহযোগিতা নিয়ে গ্রামে জলের ট্যাঙ্ক পাঠাব।” পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ কুতুবউদ্দিন জানিয়েছে, সেখানকার বেশ কিছু গ্রামে জলস্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপ বিকল হয়ে গিয়েছে। সেগুলিতে নতুন করে পাইপ বসিয়ে পুনর্খনন করা কথা ভাবা হচ্ছে। মন্ত্রীর নির্দেশ মতোই পুরনো সাবমার্সিবল চালু করা এবং একটি নতুন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আমতার জয়পুর-বাগনান রোডের কলসডিহি মোড় অবরোধ করেছিলেন কলসডিহি গ্রামেরই শতাধিক মহিলা ও কচিকাঁচারা। সকাল ৯টা থেকে কাঠের গুঁড়ি ফেলে ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। পুলিশ গিয়ে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
অবরোধকারীদের অভিযোগ, গ্রামে নলবাহিত জল সুতোর মতো পড়ে। গ্রামের শেষ প্রান্তে জল মেলেই না। গরমের মধ্যে গ্রামবাসীদের প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে। গ্রামের নলকূপগুলি সময়মতো মেরামত না হওয়ায় সেখান থেকেও জল মেলে না। মাস দুয়েক আগে পঞ্চায়েত প্রধান ও বিডিওকে সমস্যার কথা জানানো হলেও সুরহা হয়নি।কলসডিহি গ্রামটি আমতা-২ ব্লকের ঝামটিয়া পঞ্চায়েতে পড়ে। এ নিয়ে প্রধান ববিতা মেটের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইল-বার্তারও জবাব দেননি। বিডিও মাসাদুর রহমান অবশ্য বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানাননি। বিষয়টা জেনে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত যাতে ওই গ্রামের মানুষ জল পান, সেই চেষ্টা করছি।’’