আরামবাগের পল্লিশ্রী এলাকার রামকৃষ্ণ সেতুর নীচে জঞ্জালের স্তূপ। —নিজস্ব চিত্র।
শহর ভর্তি আবর্জনা নিয়ে আরামবাগ পুর এলাকার মানুষের অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই থাকে। এ বার দেশের নোংরা শহর হিসাবে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণেও নাম এল ১৯টি ওয়ার্ডের এই পুরসভার।
পরিচ্ছন্নতার বিচারে ১ লক্ষের কম জনসংখ্যার ৩৯৭০টি শহরের মধ্যে শেষ ১০০-র মধ্যে ঠাঁই হয়েছে আরামবাগের। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ৪৬টি মাপকাঠির ভিত্তিতে গত ১১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ২০২৩ ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’-এর রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এমন ‘তকমা’য় শহরবাসী অবাক হননি। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিক্ষক শঙ্কর রায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী মইদুল ইসলাম প্রমুখের অভিযোগ, বছরভর আবর্জনায় ভরে থাকে এলাকা। দুর্গন্ধ এবং মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে শহর। পলিথিন-প্লাস্টিকের আবর্জনার ছড়াছড়ি। বছরখানেক আগে পুরসভার তরফে ঘরে ঘরে বালতি দেওয়া হয়েছে পচনশীল এবং অপচনশীল আবর্জনা পৃথক করে রাখার জন্য। উদ্দেশ্য— পুরসভার সাফাইকর্মী সেই জঞ্জাল সংগ্রহ করে বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পে পাঠাবে। কিন্তু ওই প্রকল্পই এখানে তৈরি হয়নি। বিপুল পরিমাণ আবর্জনার ঠাঁই যথারীতি হচ্ছে দ্বারকেশ্বর নদের চরে।
২০১৭ সালে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ ১৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার কাজের হিসাব দাবি করেও জানতে পারেননি শহরবাসী। সেই হিসাব চেয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়ই আন্দোলন করছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আবর্জনার ক্ষেত্রে শহরের অবস্থা ভয়াবহ। ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের টাকা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। পুরসভা হিসাবই দিতে পারেনি। শহরের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের কোনও পরিকল্পনা নেই।’’ একই অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাই হল না।’’
কেন্দ্রের রিপোর্টের বাস্তবতা একপ্রকার স্বীকার করে পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারী বলেন, ‘‘বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সমস্যা ছিল। দিন কয়েক আগে তিরোল পঞ্চায়েতের সঙ্গে বসে সমস্যা মেটানো হয়েছে। আরামবাগ শহর আর নোংরা থাকবে না। দূষণও থাকবে না।’’ তিনি জানান, শহরে দৈনিক কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ হাজার টনের বেশি। নির্দিষ্ট কোনও ভাগাড় না থাকায় বাধ্য হয়েই দ্বারকেশ্বর নদের পাশে ফেলতে হয়। তিরোল পঞ্চায়েতের মান্দড়া গ্রামের পতিত মাঠে পুরসভার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের জায়গা চিহ্নিত করা হলেও বাধায় কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। এ বার কাজ শুরু হবে।
‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের দুর্নীতি এবং হিসাব প্রসঙ্গে পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘ওই প্রকল্পের কাজ হয়েছে আগের বোর্ডে। তার হিসাব যতটা পাওয়া গিয়েছে, দেওয়া হয়েছে। অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করার রাস্তা খোঁজা হচ্ছে।’’ (চলবে)