জেলমুক্ত মীনাক্ষীকে স্বাগত জানাতে রাসবিহারী মোড়ে জড়ো হয়েছিলেন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের আটক করে লালবাজারে নিয়ে গিয়েছে।
আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে মুক্ত মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
জেলবন্দি থাকার ১০ দিনের মাথায় সোমবার জামিন পেয়েছিলেন। মঙ্গলবার হাওড়া জেলা সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেলেন বাম ছাত্র এবং যুব সংগঠনের ১৫ জন নেতা-কর্মী। একই সঙ্গে আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। জেলমুক্ত মীনাক্ষীকে স্বাগত জানাতে রাসবিহারী মোড়ে জড়ো হয়েছিলেন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের আটক করে লালবাজারে নিয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তাঁদের ছাড়া হয়নি বলে এসএফআইয়ের দাবি।
মীনাক্ষী জেল থেকে বেরনোর সময় সেখানে সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা ও মা। জানা গিয়েছে, মীনাক্ষীর পায়ে চোট রয়েছে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। জেল থেকে বেরিয়ে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম আনিস খানের হত্যাকারীর শাস্তির দাবিতে। হত্যাকারী এখনও ধরা পড়েনি। তাই আমাদের আন্দোলন যেমন চলছিল তেমনই চলবে। পাঁচলা এসপি অফিসে সে দিন কী হয়েছে, তা সকলেই জানেন। দেখেছেন। তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। শুধু বলতে চাই, আনিসের খুনির শাস্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জেল থেকে ছাড়া পাবেন বলে মঙ্গলবার সকালে হাওড়া জেলা কমিটির কর্মী-সমর্থকেরা মল্লিক ফটক জেলের গেটের সামনে জড়ো হন। ওই নেতা-কর্মীরা জেল থেকে বেরিয়ে এলে তাঁদের মালা পরিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এর পর মিছিল করা হয় তাঁদের নিয়ে। জেলের গেট থেকে জিটি রোড ধরে হাওড়া ময়দানের কাছে পঞ্চাননতলা পর্যন্ত ওই মিছিল চলে। অন্য দিকে, মীনাক্ষীকে অভিনন্দন জানাতে রাসবিহারী মোড়ে হাজির হন কলকাতা জেলা কমিটির নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে ছিলেন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, ডিওয়াইএফআইয়ের কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি বিকাশ ঝা-সহ অনেকে। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশ তাঁদের আটক করে লালবাজারে নিয়ে যায়। পরে এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রতিকুর রহমান বলেন, ‘‘রাসবিহারী মোড় থেকে পুলিশ আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে গিয়েছে। আজ যদি ওদের ছাড়া না হয়, কাল থেকে কলকাতা-সহ গোটা বাংলা অচল করে দেব। এই ভাবে আনিসের খুনিদের আড়াল করা যাবে না।’’
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচলায় হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও অভিযান হয়। পুলিশের অভিযোগ, ঘেরাও চলাকালীন বাম কর্মীরা এসপি অফিসে ভাঙচুর চালান, পুলিশকে মারধর করেন এবং খুনের চেষ্টা করেন। এর প্রেক্ষিতে মীনাক্ষী-সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয় পাঁচলা থানার পুলিশ। বাম কর্মীদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে, লাঠিচার্জ করে এবং মারধর করে। আমতা থানায় লাগাতার বিক্ষোভ এবং পাঁচলায় হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার দফতর ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তুলকালাম হওয়ার পরে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী-সহ ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কর্মচারীদের মারধর-সহ বেশ কিছু অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। কেস ডায়েরি এবং পুলিশের ‘ইনজুরি রিপোর্ট’ খতিয়ে দেখার পরে এ দিন হাওড়া আদালতের বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছেন। প্রত্যেককে ১৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছে। আদালতের তরফে তাঁদের জানানো হয়েছে, জামিনে মুক্ত ছাত্র-যুবদের তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। এর আগে তিন বার মীনাক্ষীদের জামিনের আর্জি নাকচ হয়েছিল।